মোঃ তুহিন, বিশেষ প্রতিনিধি:
করোনা মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর বিরতির পর কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বাউল সাধক ফকির লালন সাঁইয়ের স্মরণে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে তিন দিনব্যাপী উৎসব শুরু হচ্ছে। উৎসব চলবে বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) পর্যন্ত। টানা চারটি উৎসব বন্ধ থাকায় তার ভাব-অনুসারী সাধু, গুরু, ভক্ত অনুরাগীরা কিছুটা হলেও হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় লালন সাঁইয়ের স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠানমালা হবে ঘোষণায় তাদের মধ্যে স্বস্তি নেমে এসেছে।
আজ সন্ধ্যা ৭টায় লালন মাজারসংলগ্ন মাঠে তিন দিনের অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্মরণোৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো: ইসমাইল হোসেন (এনডিসি)। বিশেষ অতিথি থাকবেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খ মহিউদ্দিন (বিপিএম বার), কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার খাইরুল আলম, স্থানীয় সরকার কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক মৃণাল কান্তি দে, কুষ্টিয়া আদালতের বিজ্ঞ জিপি অ্যাড.আখতারুজ্জামান মাসুম, জেলা জাসদের সভাপতি আলহাজ গোলাম মহসিন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুষ্টিয়া জেলা ইউনিটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার রফিকুল আলম টুকু, বিএমএ কুষ্টিয়ার শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা: এ এফ এম আমিনুল হক রতন, দিশার নির্বাহী পরিচালক রবিউল ইসলাম প্রমুখ। প্রধান আলোচক হিসেবে থাকছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মো: শাহিনুর রহমান। আলোচক থাকছেন অ্যাড. লালিম হক। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: সিরাজুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এনডিসি ও লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সদস্যসচিব মো: সবুজ হাসান। প্রতিদিন সন্ধ্যায় উন্মুক্ত মঞ্চে বিশিষ্টজনদের মুক্ত আলোচনা শেষে গভীর রাত অবধি চলবে খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান। আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হবে লালন সঙ্গীত।
এবারের আয়োজনে মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইজির অমর বাণী ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ প্রতিপাদ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির আয়াজনে এই লালন স্মরণোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী চলবে বাউল সম্রাট সাধক ফকির লালন সাঁইয়ের স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠান।
এ উপলক্ষে জমজমাট এখন লালন শাহের আঁখড়া বাড়ি। কুষ্টিয়া জেলা পরিণত হয়েছে উৎসবের শহরে। সুষ্ঠুভাবে আয়োজন সম্পন্ন করতে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি অনুষ্ঠানস্থলে থাকছে র্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষ গুরুর দিক্ষা দিতেই বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের আবির্ভাব ঘটে কুমারখালির ছেঁউড়িয়াতে। তিনি ছিলেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। যৌবনকালে পূর্ণ লাভের জন্য তীর্থ ভ্রমণে বেরিয়ে তার যৌবনের রূপান্তর ও সাধন জীবনে প্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। পরে সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সান্নিধ্যে তিনি সাধক ফকিরী লাভ করেন। প্রথমে তিনি কুমারখালীর ছেঁউড়িয়া গ্রামের গভীর বনের একটি আমগাছের নিচে সাধনায় নিযুক্ত হন। পরে স্থানীয় কারিগর সম্প্রদায়ের সাহায্য লাভ করেন। লালন ভক্ত মলম শাহ আখড়া তৈরির জন্য ষোল বিঘা জমি দান করেন। দানকৃত ওই জমিতেই ১৮২৩ সালে লালন আখড়া গড়ে ওঠে। তিনি প্রায় এক হাজার গান রচনা করে গেছেন। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর ভোরে এই মরমি সাধক বাউল সম্রাট মৃত্যুবরণ করেন এবং তার সাধন-ভজনের ঘরের মধ্যেই তাকে দাফন করা হয়।