মোঃ তারিকুল ইসলাম রাজিব, বিশেষ প্রতিনিধিঃ বেশ কয়েক বছর ধরে মুজিবনগর উপজেলার কৃষকরা সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষ করে সফলতা লাভ করেছে। পেঁয়াজের চাষে ঝুঁকে অনেকেই এখন লাখপতি হয়েছে। সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষে কৃষকেরা দেখছেন সুখের মুখ। বদলে গেছে তাদের ভাগ্যের চাকা।
জানা যায়, সুখ সাগর পেঁয়াজ এবং এই পেঁয়াজের বীজ মুজিবনগরের মাটিতে ভালো ফলন হয়।
আর একমাস পর প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মুজিবনগরে শুরু হবে সুখ সাগর পেঁয়াজ তোলার উৎসব। সুখ সাগর একটি অধিক ফলনশীল হাইব্রিড জাতীয় পেঁয়াজ, যা সারা বাংলাদেশের ভিতরে এক মাত্র মুজিবনগর উপজেলায় উৎপাদন হয়। ২০০৬ সালে এই পেঁয়াজের বীজ ভারত থেকে সীমান্তবর্তী এলাকা মুজিবনগরে আসে। সুখ সাগর জাতীয় পেঁয়াজ বিঘা প্রতি ১শত থেকে ১শত ২০ মণ হারে ফলন হয়। অধিক ফলনশীল ও লাভজনক হওয়া এবং আবহাওয়া মাটি উপযোগী হাওয়াই মুজিবনগর উপজেলায় ব্যাপক আকারে চাষ শুরু হয় এই পেঁয়াজের।
বর্তমানে সুখ সাগর পেঁয়াজ এর বীজ মুজিবনগরে উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় ১০ থেকে ১৫ শত হেক্টর জমিতে সুখ সাগর জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে চলতি মৌসুমে মুজিবনগর উপজেলার ১৪৫০ হেক্টর জমিতে সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এছাড়া ৫০ হেক্টর জমিতে দেশিও বারি ১ জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এবারে সুখ সাগর পেঁয়াজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২০০ মেট্রিক টন ও বারি ১ পেঁয়াজ ৯শত মেট্রিক টন।
উপজেলা কৃষি অফিস দেশি পেঁয়াজ বারি ১ চাষের জন্য ১৭৫ জন কৃষককে প্রণোদনা প্রদান করেছে। তাছাড়াও সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষের উপর মুজিবনগর উপজেলা কৃষি অফিস চাষীদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
মুজিবনগর উপজেলায় সব থেকে বেশি সুখ সাগর জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়, মোনাখালী ইউনিয়নের শিবপুর এবং বাগোয়ান ইউনিয়নের আনন্দবাস গ্রামে।
শিবপুর গ্রামের সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষ নফর গাইন দেশের বাণী পত্রিকা কে বলেন তিনি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষ করেছেন। গত বছর তিনি ৪ বিঘা জমিতে সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন, কিন্তু ভারত থেকে আমদানিকৃত বীজ ভালো না হওয়ায় খুব একটা লাভ হয়নি। এ বছর নিজের তৈরি বীজ এবং অন্য জায়গা থেকে আনা বীজ ভালো হয়েছে। এবারে তিনি ৫ বিঘা জমি থেকে খরচ বাদ দিয় প্রায় ৩ লক্ষ টাকা আয় করবেন বলে আশা করছেন।
আনন্দবাস গ্রামের সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষী আলাউদ্দিন বলেন প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরে তিনি ৬ বিঘা জমিতে সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৩ বিঘা জমিতে নিজের তৈরি পেঁয়াজ বীজ এবং ৩ বিঘা জমিতে ভারত থেকে নেওয়া বীজ বুনেছেন। এবার খুব ভালো পেঁয়াজ হয়েছে। একমাস পরে পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে। কিন্তু এ বছর খরচ একটু বেশি কারণ ডিজেলের দাম বাড়ায় সেচ খরচ বেড়েছে সাথে জন এর দামও বেড়েছে। যেখানে গত বছর বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল।সেখানে এ বছর ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হবে।
সরকার যদি আমাদের পেঁয়াজ ওঠার সময় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখে এবং মণপ্রতি ১ হাজার টাকা করেও দাম পায় তাহলে এবছর খরচ বাদ দিয়ে তিন থেকে চার লক্ষ টাকা লাভ হবে।
সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষের বিষয়ে মুজিবনগর উপজেলা কৃষি অফিসার আনিসুজ্জামান খান বলেন, সুখ সাগর পেঁয়াজ একমাত্র মুজিবনগর উপজেলায় চাষ হয়। উপজেলায় চাহিদা মিটিয়ে এই পেঁয়াজ সারা বাংলাদেশের রপ্তানি করা হয়। পেঁয়াজ উঠার সময় মুজিবনগর উপজেলার চাষীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। এবারের পেঁয়াজ চাষে খরচ একটু বেশি হচ্ছে কিন্তু আবহাওয়া ভালো থাকায় এ বছর সুখ সাগর পেঁয়াজ এর ফলন ভাল হবে বলে আশা করছি।
সরকার যদি মার্চ মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখে তাহলে উপজেলার পেঁয়াজ চাষীগন পেঁয়াজের ভালো মূল্য পাবে এবং এই পেঁয়াজ চাষে আরো আগ্রহ বাড়বে।