আবু হাসান আপন, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ

নবাগত ইউএনও নবীনগরে যোগদানের আগেই তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর ) নবীনগর উপজেলায় পৃথক পৃথক ভাবে দুটি মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল নবীনগর উপজেলা পরিষদ সড়কের প্রেসক্লাবের সামনে। নবীনগর উপজেলার সর্বস্তরের শিক্ষার্থী”র ব্যানারে কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী মানববন্ধনের মাধ্যমে দাবী তুলছেন বর্তমান ইউএনও মোহাম্মদ তানভীর ফরহাদ শামীম এর বদলী ঠেকাতে। এ সময় তারা বর্তমান ইউএনও মোহাম্মদ তানভীর ফরহাদ শামীমকে একজন দক্ষ আন্তরিক ও মানবিক ইউএনও হিসেবে দাবী করে ছাত্র জনতার মনের ইচ্ছা পূরণ ও নবীনগরের প্রয়োজনে তাকে স্বপদে বহাল রেখে, তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া ইউএনও মোঃ আরিফুর রহমানকে একজন দুর্নীতিবাজ খারাপ কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ উদ্ধৃতি হিসেবে উল্লেখ করেন।

গত ৫ই আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পূর্বে লক্ষীপুর সদরের  ইউএনও আরিফুর রহমানকে নানাভাবে হেনস্থা ও মিথ্যা অভিযোগে জর্জরিত করার অভিযোগ উঠেছে লক্ষীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়া স্বৈরশাসকের একনিষ্ট লোক লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কুখ্যাত মেয়র তাহেরের ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু এলাকায় পরিচিত ছিলো মাফিয়া হিসেবে। যার ফলে সে কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করতো না। সে প্রভাবশালী হওয়াই তার ভয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তো দুরে থাক, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কাকপক্ষীও তার ভয়ে কখনো মুখ খুলতে সাহস পেত না। উপজেলা রাজস্ব থেকে নেয়া উন্নয়ন প্রকল্প, টি আর কাবিখা, কাবিটা থেকে নেয়া প্রকল্প সহ উপজেলায় লুটপাট করাই ছিল তার প্রধান কাজ। কাজ বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিল করাই ছিল তার একমাত্র নেশা। তাছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দীর্ঘ সাত বছর একই স্টেশনে থাকায় তার সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান মাফিয়া টিপুর আলাদা সখ্যতা তৈরি হয়। ইউএনও আরিফুর রহমান সেখানে যোগদান করার পর এসব লুটপাট বন্ধে সোচ্চার হন। টি আর কাবিখা সহ সকল কাজ বাস্তবায়ন না করে তিনি কখনো বিল পরিশোধ করতেন না। তখন উপজেলা নির্বাচন সামনে থাকায় কুখ্যাত উপজেলা চেয়ারম্যান টিপু লুটপাট বন্ধ করে দিলেও ইউএনওকে কিছু বলেননি।

পরবর্তীতে সে গত ২৯ শে মে তৃতীয়বারের মত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হয়েই সে ৪ঠা জুন থেকে ইউএনওর উপর নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে হেনস্থাসহ মিথ্যা অভিযোগে জর্জরিত করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি ইউএনওকে বলেন আমি আর আগের উপজেলা চেয়ারম্যান নই, এতদিন নির্বাচন সামনে থাকায় আপনাকে কিছু বলিনি। এখন আমি যা বলব তাই হবে। তারপর তিনি ইউএনওকে নির্দেশ দেন প্রকল্প নিতে এবং আরও জানান প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে না কিন্তু বিল দিয়ে দিতে হবে। ইউএনও তাতে রাজি হয়নি। এক পর্যায়ে তিনি ইউএনওর উপর আরো বেশি চাপ তৈরি করতে থাকেন। তখন ইউএনও তার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন। কোনভাবেই ইউএনওকে বাগে আনতে না পেরে সে তখন ষড়যন্ত্র করতে থাকে। একপর্যায়ে সে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার কথা বলে একবেলা ভাত খেতে চান এ কথা বলে সে তার দলীয় নেতাকর্মী ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের দাওয়াত দেন। পরবর্তীতে এ দাওয়াতকেই ভিন্ন নাম দিয়ে তিনি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রচার করান। নিউজ এর সত্যতা না থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যানরা টিপুর ভয়ে এ নিয়ে কোন টু শব্দ করার সাহস পাননি।

পরক্ষণে সম্প্রতী কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় উপজেলা চেয়ারম্যান টিপু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল। তার গুলিতে চারজন ছাত্র নিহিত হয়। গত ৫ই আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্থানীয় উত্তেজিত জনতা টিপুর বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। সে এখন পলাতক রয়েছেন।

এ ব্যাপারে লক্ষীপুর সদরের সাবেক ইউএনও আরিফুর রহমান বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু সম্প্রতি সরকার পতনের পূর্বে আমাকে নানাভাবে হেনস্থা ও মিথ্যা অভিযোগে জর্জরিত করেছিলেন। তাকে লুটপাটের সুযোগ দিতে রাজি না হওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে সরকারবিরোধী বলে প্রকাশ্যে হুমকিধমকি দিত। তাছাড়া বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ফেইক অনলাইন লিংক তৈরি করে মানুষকে পাঠাত যার সত্যতা পরে পাওয়া যায়নি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ইউএনও হিসেবে বদলী করা হয়েছে। আমি নবীনগর ইউএনও হিসেবে যোগদান করলে আমি আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাবো ইনশাআল্লাহ্।