শফিকুল ইসলাম সাগর গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি:

গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট এলাকা থেকে কলেজ ছাত্রীকে অভিনব কায়দায় মাইক্রোতে করে অপহরন করে নিয়ে যায় অপহরণকারি। পুলিশ ১দিন পর অপহৃতা আয়শা সিদ্দিকা আখি আক্তার কে উন্নত তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ২৮ ফেব্রুয়ারী সোমবার রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ৬ নং টুকুরিয়া ইউনিয়নের এলাকা থেকে উদ্ধার করেছেন। তবে অপহরণকারির কাউকে এখন পর্যন্ত পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি বলে জানা যায়। জানা যায় ওই কলেজ ছাত্রী সহপাঠিদের সাথে গত ২৭ ফেব্রুয়ারী সকালে প্রাইভেট পড়তে যাবার সময়,পথিমধ্যে ইসলামপুর তালের দিঘী নামক স্থানে পথরোধ করে এবং তার সহপাঠিদের মারপিট করে জোর পূর্বক সাদা রংঙ্গের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় উক্ত কলেজ ছাত্রী আখি আক্তারকে।

এসময় আখি আক্তার ও তার সহপাঠিদের চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এসেও অপহরণকারিদের দাপটে কেউ কথা বলার সাহস পায়নি। এ যেন ফিল্মী ষ্টাইলে ঐ কলেজ ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গেছে পীরগঞ্জ উপজেলার বাজিত কাসিমপুর গ্রামের মৃতঃ শাহাজাহান ডাক্তারের পুত্র বখাটে আরমান ও তার সঙ্গীরা। ওই কলেজ ছাত্রীর সহপাঠিরা ৯৯৯ লাইনে ফোন দিলে সাথে সাথে পুলিশ ভিকটিম উদ্ধারে মাঠে নামেন। অবশেষে অপহরনের ১দিন পর আখি নিজ কৌশলে অপহরন কারীর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পরিবারের লোকজনের কাছে ফোন দেয়। আখির পিতা পুলিশ সহ পীরগঞ্জের ৬নং টুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে নব নির্বাচিত চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় তার কন্যাকে উদ্ধার করে। আখি আক্তার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের মোংলা পাড়া গ্রামের জনৈক শিক্ষকের কন্যা বলে জানা যায়। আখির পরিবার জানায়, আখি কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী, তাই প্রতিদিনের ন্যায় তার দু বান্ধবী সহ অটোভ্যান যোগে ধাপেরহাট বন্দরে প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়,পথিমধ্যে ইসলামপুরের তালের দিঘী নামক স্থানে ফাঁকা রাস্তায় অপরিচিত দু’জন লোক মটর সাইকেল নিয়ে তাদের পথরোধ করে,তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক হলে অটোভ্যান চালকের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এসময় পিছন থেকে একটি সাদা রংঙ্গের মাইক্রোবাসে বখাটে আরমানসহ ৭/৮ জন যুবক এসে সহপাঠি/বান্ধবীদের মারপিট করে আখি কে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ধাপেরহাট অভিমুখে চলে যায়, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আখির বান্ধবী জানায়, আমরা সবাই চিল্লাচিল্লি করেছি আখিকে বাঁচাও বাঁচাও বলে, অটোভ্যান চালক অপহরনকারীদের বাধা দিয়েছে, কোন বাধায় কাজ হয়নি, আমাদেরকে মারপিট করে ভয়ভীতি দেখিয়ে আখিকে তুলে নিয়ে গেছে। আমরা উপায়ান্তর না পেয়ে ৯৯৯ লাইনে ফোন করেছি, ততক্ষনে তারা আমাদের বান্ধবী কে তুলে নিয়ে চলে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আখির অপর বান্ধবী জানায়, আমাদের নিরাপত্তা কোথায়, এত লোকের সামনে প্রকাশ্যে দিন দুপুরে বখাটেরা আমাদের বান্ধবী কে তুলে নিয়ে গেলেও কেউ আমাদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। আখির মা জানিয়েছেন পীরগঞ্জের আরমান আমার মেয়েকে অপহরন করেছে। ইতিপূর্বেও ঐ বখাটে আরমান আমার মেয়েকে জিম্মী করে বিয়ের নাটক সাজিয়ে ছিলো অনেক কষ্টে আমার মেয়েকে সেখান থেকে মুক্ত করে এনে কলেজে ভর্তি করে দিয়েছি কিন্ত ঐ আরমান আবার পুনরায় এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি আরমানের বিচার চাই।

তদন্তকারী অফিসার ধাপেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সুদক্ষ ও চৌকস পুলিশ পরিদর্শক, ইনচার্জ সেরাজুল হক জানায়, অপহরণের বিষয়টি জানার সাথে সাথেই আমরা উন্নত তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের অবস্হান সনাক্ত করতে সক্ষম হই। ওই এলাকায় পুলিশি নজরদারী রাখি এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার দুপুরে ভিকটিম কে উদ্ধার করতে সক্ষম হই। এ সময় পুলিশের উপস্হিতি টের পেয়ে আসামীরা পালিয়ে যায়।পীরগঞ্জের টুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পাশের একটি বাড়ী থেকে ভিকটিম কে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সাথে জড়িতদের অবস্থান সনাক্ত ও গ্রেফতারের জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
ধাপেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সেরাজুল হক আরো জানায়,পুলিশের কাজ জনগণের সেবা করা। ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথেই আমি ও আমার চৌকস টিম নিয়ে অপহরণকারিকে উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করি এবং ভিকটিমকে উদ্ধারে সফল হই।

উল্লেখ্য, ইনচার্জ সেরাজুল হক ধাপেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে যোগদান করার পর থেকে একের পর এক সফল অভিযান চালিয়ে অত্র এলাকার মানুষের আস্হা ও ভালবাসা অর্জন করেছেন। পুলিশ জনগণের বন্ধু এ ধারণার বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়েছেন এই এলাকায় তিনি। ইতিপূর্বেও তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামীকে গ্রেফতার ও অনেক ভিকটিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটন করে তিনি জেলা পুলিশের ও রংপুর রেঞ্জ কর্তৃক সম্মাননা স্মারক অর্জন করেন। এছাড়াও ডাকাতি মামলার আসামীকে গ্রেফতার, হত্যা মামলার আসামীকে গ্রেফতার, চিনির ট্রাক ছিনতাই নাটকের চিনি উদ্ধার ও আসামীকে গ্রেফতার সহ তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন মামলার আসামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ প্রশাসনের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।ধাপেরহাট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দিনরাত কাজ করে চলেছেন ইনচার্জ সেরাজুল হক ও ধাপেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের চৌকস টিম।