সাব্বির হোসাইন, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল এ মাসের শেষের দিকে প্রকাশিত হবে। ফলাফল প্রকাশের পর থেকে শুরু হবে অবিভাবকদের বিভিন্ন মতামত। অনেক অবিভাবকরা, ভালো ফলাফল, জিপিএ-৫ দিয়ে যাচাই-বাছাই করেন শিক্ষার্থীদের মেধা। তবে বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকরা বলছেন, ভালো ও খারাপ ফলাফলকে নিয়ে অবিভাবকদের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা খুবই জরুরি। গত কয়েক দশক ধরেই এসএসসিসহ বাংলাদেশের অন্যান্য বোর্ড পরীক্ষার পাসের হার গড়ে ৮৫-৯৫ শতাংশের মধ্যে থাকছে। অথচ গত তিন দশক আগেও এসএসসি বা তৎকালীন মেট্রিক পরীক্ষায় পাসের হার থাকতো ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে। এর পেছনে গ্রেডিং পদ্ধতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনকে বড় কারণ বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের শেখানোর পরিবর্তে তাদের মুখস্থ করিয়ে ভাল ফল করার ওপরেই কতো কয়েক দশক ধরে জোর দেয়া হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি অস্থির প্রতিযোগিতা হচ্ছে জিপিএ-৫ নিয়ে। খাতা মূল্যায়নের শিথিলতার কারণেও ফলাফলে এতো আমূল পরিবর্তন এসেছে। প্রতিবছর এতো ভুরি ভুরি জিপিএ-৫ এবং হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতভাগ পাস নিয়ে প্রায়ই সমালোচনা হয়। কারণ এই শিক্ষার্থীদের অনেকেরই জিপিএ-তে ভাল ফলের প্রতিফলন তাদের কর্মজীবনে সেভাবে দেখা যায় না। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় মানের ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল প্রকাশের পর। দেখা যায়, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী পাশ করতে পারে না। শিক্ষাবিদরা বলছেন, যদি দেশের সব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় তাও বলা যাবে না যে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা গুণগত-মান অর্জন করেছে। কারণ এই মান নির্ভর করে শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধা এবং মানসম্মত শিক্ষকের ওপর। এই বিষয়গুলোর উন্নয়নে শিক্ষকদের আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ঠিক রাখা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দূরত্ব কমানো, পাঠদানের সময় বাড়ানো, বই সন্নিবেশ, বিভিন্ন সৃজনশীল সহশিক্ষা কার্যক্রমের আয়োজন, পুরো প্রক্রিয়ায় প্রশাসনের মনিটরিং এবং নিয়মিত গবেষণার ওপর শিক্ষাবিদরা জোর দিচ্ছেন। সৃজনশীল সহশিক্ষা কার্যক্রম শুধু ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে শিক্ষার্থীদের ভাষা শেখানো, আত্মবিশ্বাস অর্জন, বিশেষ করে যার যেদিকে আগ্রহ সেদিকে গুরুত্ব দেয়ার ওপর জোর দেবার পরামর্শ তারা দিয়েছেন। সেটি সাংস্কৃতিক চর্চা, বিজ্ঞান চর্চা, খেলাধুলা, বিতর্ক, পড়াশোনা, যেকোনো কিছু হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শও তারা দিয়েছেন। চলতি বছরের সকল শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল (২৮ জুলাই) শুক্রবার প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি।