নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:

“দেশি ফল বেশি খাই, আসুন ফলের গাছ লাগাই”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে নওগাঁ জেলা সদরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে শুরু হয়েছে জাতীয় ফল মেলা ২০২৫।

বুধবার (১৯ জুন) থেকে শুরু হওয়া এই মেলা তিন দিনব্যাপী- ২১ জুন পর্যন্ত চলবে। স্থানীয় কৃষকদের অংশগ্রহণ, দেশি ফলের বৈচিত্র্য, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রদর্শন এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই আয়োজন প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে কৃষি সমাজে।

মেলাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে নওগাঁ সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, “দেশীয় ফলের চাষ বৃদ্ধি, পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং কৃষি অর্থনীতিকে গতিশীল করতেই এই জাতীয় ফল মেলার আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

মেলায় বিভিন্ন স্টলে প্রদর্শিত হয়েছে আম, লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারা, ডালিম, বেল, জাম, আনারস, সফেদা, ড্রাগন ফলসহ নানা ধরনের দেশি ফল। প্রতিটি ফলের পাশে লেবেলসহ প্রদর্শিত হয়েছে জাত, উৎপাদন পদ্ধতি এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কিত তথ্য। ফল প্রদর্শনের পাশাপাশি ছিলো GAP (Good Agricultural Practices) ভিত্তিক ফল উৎপাদনের মানসম্মত প্রক্রিয়া সম্পর্কিত সচেতনতামূলক পোস্টার ও প্রেজেন্টেশন।

মেলায় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফল ও উদ্ভাবনী পদ্ধতি প্রদর্শনের সুযোগ পান। এই মেলায় অংশগ্রহণকারী একজন কৃষক জানান, “এধরনের মেলা আমাদের উৎসাহিত করে উন্নত জাতের ফল চাষে। একইসঙ্গে প্রযুক্তি ও বাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায়।”

মেলায় কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কিত স্টলেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। স্টলে কৃষি অ্যাপ, ডিজিটাল সেবা, প্রক্রিয়াজাত পণ্য যেমন—জ্যাম, জেলি, আচার, ফল নির্যাস ইত্যাদিও প্রদর্শিত হয়েছে। এসব প্রযুক্তি স্টল কৃষকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, নওগাঁ জেলায় এ বছর আম চাষের আওতায় ৬ হাজার ৪০০ হেক্টরের বেশি জমি রয়েছে, যা দেশের অন্যতম বৃহৎ আম উৎপাদক অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। ফল উৎপাদনে এ অঞ্চলকে রফতানির জন্য প্রস্তুত করতে এমন মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও জানান কর্মকর্তারা।

মেলার শেষ দিনে ফল চাষে অবদান রাখা কৃষক ও সেরা স্টলকে পুরস্কৃত করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। এতে কৃষকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।

এ জাতীয় ফল মেলা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি সচেতনতা এবং কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে টেকসই করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।