মো. নাহিদুল ইসলাম ফাহিম, রাজবাড়ী :

রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে স্মরণসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে রাজবাড়ী সরকারি কলেজের উদ্যোগে কলেজ ক্যাম্পাসে এ আয়োজন করা হয়।

ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ এবং জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপরে অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের আহবায়ক রাজবাড়ী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবুল উবায়েদ মোহাম্মদ বাসেত ঠাকুর। এসময় আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এরপর শুরু হয় স্মরণসভা। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজবাড়ী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হোসনেয়ারা খাতুন। সভায় বক্তব্য দেন রাজবাড়ী সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফকীর মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক মোস্তফা কামাল, কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মো. টোকন মন্ডল, কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন রাজবাড়ী সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের
প্রভাষক সুরজিত চক্রবর্তী।

এসময় শহীদদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, আন্দোলনে নিহত শহীদ সাগরের পিতা মো. তোফাজ্জল হোসেন, শহীদ আব্দুল গণি মিয়ার স্ত্রী লাকি আক্তার এবং শহীদ শহীদ কোরবান শেখের মেয়ে মিতু আক্তার।

এসময় অধ্যাপক হোসনেয়ারা খাতুন বলেন, ‘আমরা যে যখন দায়িত্ব পাচ্ছি, আমরা ভেবেছি বাংলাদেশটা একটা লাশ। আর আমরা হচ্ছে এক হিংস্র পশু, যারা সুযোগ পেলেই এই দেশটাকে ছিড়ে খাচ্ছি। এই চিন্তা চেতনা থেকে আমরা যখন বেড়িয়ে আসতে পারবো, কেবল তখনই আমাদের রক্তদান বন্ধ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা দেখেছি নবাব সিরাজুদ্দৌলার পতনের পরে ইংরেজদের রাজনৈতিক কূটনৈতিক কারণে আমরা বৈষম্যের শিকার হই। সেটা থেকে প্রায় ২শ বছর পর আমরা মুক্তি পেলেও আরেকবার বৈষম্যের শিকার হই পাকিস্তান সরকারের আমলে। সেই অবস্থা থেকেও ১৯৭১ সালে কয়েক লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা বৈষম্যহীন এই স্বাধীন ভূখন্ড পেয়েছিলাম। তখন আমরা ভেবেছিলাম গণতান্ত্রিকভাবে হয়তো আমরা স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু না, আমাদেরকে আবারও সেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেই যোগদান করতে হলো এবং আবারও বাংলার মাটি রক্তে রঞ্জিত হলো। তবে এর একমাত্র কারণ হলো দেশপ্রেমের অভাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একাত্তরের শহীদদের প্রতিদান দিতে পারিনি, এখন চব্বিশের শহীদেরা যুক্ত হয়েছে। এই চব্বিশের প্রতিদান যদি আমরা দিতে যাই, তাহলে আমাদেরকে একেবারেই নতুন শিশুর মতো নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে এবং নিজেদেরকে দেশের জন্য আত্মনিয়োগ করতে হবে।’

স্মরণসভা শেষে রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থিয়েটারের পরিবেশনায় অধ্যাপক আবুল উবায়েদ মোহাম্মদ বাসেত ঠাকুরের শিল্প নির্দেশনায় এবং রেজোয়ান হোসেনের নির্দেশনায় ‘ রক্তে কেনা দেশ ‘ নাটকটি মঞ্চায়ন করা হয়।