সাব্বির হোসাইন, স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লাঃ
১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্য-বীর্য ও বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে এক বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম শেষে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন দেশ রচিত হয়েছিল। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। দিবসটি উপলক্ষে বর্তমান শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কতটুকু জানেন সেটা জানতে, কুমিল্লা জেলার সুনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি কলেজ, কুমিল্লা মহিলা সরকারি কলেজ, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারি কলেজ, কুমিল্লা কর্মাস কলেজ, কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ, লালমাই সরকারি কলেজ, কুমিল্লা হাই স্কুল, কুমিল্লা মর্ডান হাই স্কুল, ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ১৬ই ডিসেম্বর কি দিবস? ১৬ই ডিসেম্বর কি ভাবে আমাদের হলো? ১৬ই ডিসেম্বরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য কি সম্পর্কে জানতে চাইলে অনেকে বলেন, স্বাধীনতা দিবস, অনেকে জানেনই না, বলতে চায়নি অনেক শিক্ষার্থীরা। কিছু শিক্ষার্থী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে তাদের ধারণাই নেই, সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও পরিবর্তন হয়। শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তকেও নেই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। তবে লক্ষ্য করেছি আধুনিক প্রযুক্তি মোবাইল ফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে তাদের ধারণা যথেষ্ট। নিজেদের অধীত বিষয় সম্পর্কেও তারা জানে। দেশের বিভিন্ন ‘সেলিব্রিটি’ সম্পর্কেও তারা সম্যক পরিচিত। পরিচিত নন শুধু আমাদের প্রকৃত নায়করা, বীর মুক্তিযোদ্ধারা। দেশ ও বিদেশের বিখ্যাত সাহিত্যকর্মের সঙ্গেও তারা পরিচিত না। বোঝা যায়, শপিং মল আর রেস্তোরাঁ বাড়তে থাকা বর্তমান সমাজে বহু কমবয়সী একদিকে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে চিন্তাশীল বই পড়তে আগ্রহী নয়, অন্যদিকে দেশের ইতিহাস সম্পর্কেও উদাসীন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষার্থীদের সত্যিকারভাবে ইতিহাস-সচেতন করতে প্রয়োজন এমন একটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশ নির্মাণ করা যেখানে মানুষ ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব অনুধাবন করবে। যদি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা আর অনুষ্ঠান গণমাধ্যমে কয়েকটি বিশেষ দিনেই প্রচার করা হয়; বেশির ভাগ সময় গুরুত্ব দেওয়া হয় বিনোদনধর্মী অনুষ্ঠান আর সেলিব্রিটিদের; সে ক্ষেত্রে ইতিহাসচর্চার প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরি হবে না। দরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাজে পরিচিত করে তোলা। মুক্তিযুদ্ধ ও ১৬ই ডিসেম্বর সম্পর্কে বর্তমান শিক্ষার্থীর এমন উদাসীনতা নিয়ে এক শিক্ষক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান সম্পর্কেই যদি নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা না জানে, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তারা মনে ধারণ করবে– এমন আশা করা যায় না। যদি মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও চেতনা আমরা সমুন্নত রাখতে চাই তাহলে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। ইতিহাসের প্রতি উদাসীনতা এবং ইতিহাস-জ্ঞানের অভাব শিক্ষার্থীদের চিন্তাশীল ও বিচক্ষণ করবে না কোনোভাবেই। শিক্ষার্থীরা যদি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস না জানে, তাহলে বিপদগ্রস্ত হবে রাষ্ট্র।