ইমরান জাহেদ, কক্সবাজার ॥
‘আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই, ফুলের মালা গলায় দিয়ে মামার বাড়ে যাই। ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ, পাকা আমের মধুর রসে রঙিন করি মুখ……।’ পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের ‘মামার বাড়ি’ কবিতার এ অংশটি বাস্তবে রূপ পেতে বাকি রয়েছে আর মাত্র কয়েকটি মাস। উখিয়ার গাছে গাছে ফুটে উঠা আমের মুকুল থেকে যে ঘ্রাণটুকু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে আম পিপাসুর তথা আম চাষীদের পাগল প্রাণ। বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ। যে গন্ধ মানুষের মনকে বিমোহিত করে। পাশাপাশি মধুমাসের আগমনী বার্তা শোনাচ্ছে আমের মুকুল। উখিয়া উপজেলা আমের জন্য বিখ্যাত না হলেও এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরিবার বাণিজ্যিক ভাবে আম চাষ করে আসছে। এসব আম গাছে শোভা পাচ্ছে কেবলই মুকুল। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। মুকুলে ছেয়ে আছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। চারদিকে ছড়াচ্ছে সেই মুকুলের সুবাসিত পাগল করা ঘ্রাণ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর আমের বাম্পার হতে পারে বলে মনে করছেন আম চাষীরা।
এদিকে মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মুকুলে ভরে গেছে বাগানসহ ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত আম গাছগুলোতে। তবে বড় আকারের চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গাছে বেশি মুকুল ফুটেছে। সেই মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে বাগান মালিকদের চোখে ভাসছে অনাবিল আনন্দ ও আগত দিনের স্বপ্ন। গাছের পুরো মুকুল ফুটতে আরও কয়েক সপ্তাহ লাগবে বলে জানান বাগান মালিকরা ছৈয়দ আলম। প্রত্যন্ত জনপদ লম্বাঘোনা গ্রামের ২ একর পাহাড়ী জমিতে ৫ বছর আগে প্রায় ২ শতাধিক আমগাছ লাগানোর কথা স্বীকার করে ওই আমচাষী বলেন, তার বাগানের গাছে যেভাবে মুকুল পড়েছে তাতে আম ধরলে গাছ ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য সে দিনরাত বাগানে পরিশ্রম করছেন যেন পরিবেশগত কারণে আমের মুকুল ঝড়ে না যায়।
দোছরী গ্রামের বাগান মালিক নজু মিয়া ও ফজল করিম জানান, প্রায় সপ্তাহখানেক আগে থেকে তাদের বাগানের আম গাছে মুকুল আসা শুরু করেছে। বর্তমানে পুরো বাগানের আম গাছ গুলো মুকুলে ছেয়ে গেছে। তারা বলেন, প্রাকৃতিক দূযোর্গ না হলে এবার আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তারা জানান, মুকুল আসার পর থেকেই তারা গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করেছেন। মুকুল রোগ বালাইয়ের আক্রমন থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ স্প্রে করছেন তারা।
উখিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুয়ারী, উখিয়ায় ২২০ হেক্টর জমিতে আম বাগান থাকার কথা উল্লেখ করা হলেও স্থানীয় ভুক্তভোগীদের তথ্য মতে প্রায় সাড়ে ৪শ’ হেক্টর পাহাড়ি ও কৃষি জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমগাছ রোপন করা হয়েছে। আমচাষীরা বলছেন, তারা আম বাগান করে লাভবান হওয়ার সুবাদে বাগান সম্প্রসারিত করেছে। তাদের দেখা মতে অন্যান্যরাও আম চাষে উদ্ধুদ্ধ হওয়ায় গ্রামে গ্রামে আম চাষের হিড়িক পড়েছে। মৌসুমে এখানে বিপুল পরিমাণ আম উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানকার উৎপাদিত আম স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের অন্যান্য জায়গাও চালান হয়ে থাকে।
উপজেলা কৃষি অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জাকিরুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর ২২০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। তিনি বলেন, আম বাগানগুলো পরিদর্শন করে চাষীদের আম চাষের পাশাপাশি কমলা, মাল্টা ও লেবু চাষে উদ্ধুদ্ধ করা হবে এবং প্রয়োজনীয় চাহিদা মোতাবেক সহযোগীতা প্রদান করা হবে।