মোঃ সোহেল রানা ( বরগুনা )ঃ
বরগুনার বেতাগীতে বসতঘরে ডাকাতি করে মালামাল লুটের পর ওই ঘরে থাকা তিন সন্তানের জননী বিলকিস বেগম(৫০) নামের এক বৃদ্ধাকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের মাছুয়াখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত বিলকিচ বেগম ওই গ্রামের মৃত মন্নান মিয়ার স্ত্রী। হত্যার বিষয়টি শনিবার সকালে প্রথম নিশ্চিত করেন ওই বাসার ভাড়াটিয়া মাওলানা আবদুর রহমান জুয়েল।
জানা যায়, তিন সন্তানের জননী নিহত বিলকিস বেগম ছেলেদের চাকরীর সুবাদে বেশ কয়েকবছর যাবৎ স্বপরিবারে ঢাকায় বসবাস করতেন। কোরবানির ঈদকে উদ্দেশ্য করে তিনি গত মঙ্গলবার গ্রামের বাড়িতে আসেন । কয়েকদিন পর ছেলেদেরও আসার কথা ছিলো গ্রামের বাড়িতে, কথা ছিলো পরিবারের সবাই মিলে একসাথে ঈদ করবেন। কিন্তু সেই আশা পূরণ হওয়ার আগেই ডাকাতের হাতে খুন হন বৃদ্ধা বলিকিস বেগম। তবে এ ঘটনাটি সংঘবদ্ধ ডাকাতরা ঘটিয়েছেন, নাকি কেউ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন! এ ব্যাপারে এখনো পুলিশের কাছ থেকে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনার সঠিক রহস্য উন্মোচনে বেতাগী থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবিসহ সিআইডির টিম কাজ করছেন বলে জানান বেতাগী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, বিলকিস বেগমের পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকেন। গ্রামের বাড়ি দেখাশোনার জন্য একজন ভাড়াটিয়া থাকেন। ঘটনার সময় তিনিও ওই পাকা বাড়িতে স্বপরিবারে ঘুমে ছিলেন। এর মধ্যেই গভীর রাতে ডাকাতি ও হত্যাকান্ড ঘটে। স্থানীয়রা আরো জানান, যে ঘরে বৃদ্ধা বিলকিস বেগমকে হত্যা করা হয়েছে সেটি চারপাশে সুউচ্চ প্রাচীরে ঘেরা একটি সম্পূর্ণ পাকা বাড়ি। রাতে ওই ঘরে থাকা ভাড়াটিয়া কিংবা আশেপাশের কোনো লোক কোনো ধরণের ডাক চিৎকারের আওয়াজও পাননি। তবে সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে দেখা যায় একটি জানালার চারটি লোহার গ্রীল কাটা রয়েছে। এছাড়াও ওই বৃদ্ধার শরির রক্তাক্ত এবং শরিরের দুই কানের অংশ কাটা এবং কানের অলংকার নেই। তাই প্রাথমিকভাবে সকলের ধারণা এটি ডাকাতি এবং লুটপাটের সময় বাধা দেওয়ায় ডাকাতরা ওই বৃদ্ধাকে হত্যা করেন।
ওই ঘরের ভাড়াটিয়া মাওলানা আবদুর রহমান জুয়েল বলেন, আমি একটি নূরানী মাদ্রাসায় চাকরি করার সুবাদে এখানে ভাড়া থাকি। রাতে আমি ও আমার পরিবার বাসার সামনের বাড়ান্দায় ঘুমে ছিলাম। প্রতিদিনের মত সকালে ফজরের নামাজের পরে আমার স্ত্রী তাকে (বিলকিস বেগমকে) ডাকতে গেলে তার শয়ন কক্ষটি এলোমেলো দেখে এবং খাটে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকতে দেখে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । পরে আমি দৌড়ে গিয়ে দিশেহারা হয়ে যাই। পরে তার ছেলেদের খবর দেই এবং এলাকার মানুষদের ডাকি। কিভাবে কি হয়ে গেলো আমরা কেউ কিছু টেরই পাইনি।
বেতাগী থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। আমরা ঘটনার সঠিক রহস্য উন্মোচনে কাজ করছি, আমাদের সাথে ডিবি ও সিআইডির টিমও কাজ করছেন। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে। তদন্ত শেষে এ হত্যাকান্ডের মূল রহস্য জানা যাবে।