নন্দীগ্রাম থেকে মামুন আহমেদ:

১৫বছর বয়সী অটোভ্যান চালক সেই স্বর্ণার পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হুমায়ুন কবির। যে বয়সে স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে তিন চাকার অটোভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে স্বর্ণা। অভাবের সংসারে হাল ধরেছে এই ১৫ বছর বয়সী স্বর্ণা আক্তার। বাবা নেই, মা-ভাই দু’জনই মানসিক ভারসাম্যহীন মা-ভাইয়ের মুখে দু’বেলা দু-মুঠো খাবার তুলে দিতে এবং মায়ের চিকিৎসার জন্য স্কুল জিবনকে মাটি দিয়ে অল্প বয়সেই জীবন যুদ্ধে নেমেছে স্বর্ণা। প্রাপ্ত তথ্য ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতা-মাঝগ্রাম ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মৃত আসকর আলীর মেয়ে স্বর্ণা। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটারের দূরের পথ তাদের বসবাস। মানসিক প্রতিবন্ধী মা-ভাইকে নিয়ে প্রতিবেশীর জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। বাড়ি করে থাকার মতো কোনো জমি নেই তাদের, ভূমিহীন এই পরিবারকে সহযোগিতার জন্য ছাঁয়ার হাত টুকুও বাড়িয়ে দেয়নি কেউ। দারিদ্রতার কারণে স্বর্ণা আক্তারের লেখাপড়ার সৌভাগ্য হয়নি। সংসার এবং মায়ের চিকিৎসার জন্য দিনভর রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে উপার্জন করছে স্বর্ণা। অটোভ্যান কী ফেরাবে ওই অসহায় পরিবারের ভাগ্য? এমন মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় সুত্রে জানা যায় ত্রিমহনী এবং গুলিয়া কৃষ্ণপুর বাজারে প্রতিদিনই অটোভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে স্বর্ণা। ডেকে ডেকে যাত্রী তুলে পৌঁছে দিচ্ছে গন্তব্যে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যাত্রী সংখ্যা এবং ভাড়া দুটোই কম। যাত্রীর জন্য অনেক সময় অপেক্ষায় থাকা ওই কিশোরীর চোখ-মুখে থাকে হতাশার ছাপ। স্বর্ণার বাবা মারা যাওয়া ও মা ভাইদু’জনই মানসিক রোগী হওয়ার কারণে শিকা জিবনকে মাটি দিয়ে মা-ভাইয়ের মুখে দু’বেলা দু-মুঠো খাবার তুলে দেওয়ার জন্য এই ১৫ বছর বয়সেই প্রতিনিয়ত চলেছেন যুদ্ধ করে। স্বর্ণার সাথে কথা বললে অশ্রæসিক্ত নয়নে স্বর্ণা এই প্রতিনিধিকে জানান, ভাইগো হামার বাপ নাই, মা আর ভাই দুইজনই পাগল, বাড়িত নানীও আছে সকাল করে কত ছেলে পেলে ইস্কুলে যায় কিন্তু হামার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়না। মা অসুস্থ, বড় ভাই ঢাকাতে থাকে,অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা ও সংসার চালাতেই আমার দিন যায়, বাড়িত কামাই করার মতো কেউ নাই, কামাই না করলে পেট চলবে কি করে। বড় ভাই ঢাকাত থাকে, কখনও ট্যাকা দেয়, কখনো দেয় না। হামাকেরে তো খাওয়া লাগবি, না খায়্যা থাকমু কেমনে। ম্যালা না খায়্যা থাকছি আর পারিনা না খায়্যা তাকতে। ওই জন্যেই এখন ভ্যান চালাই। দিনে ৩শ’ থেকে ৪শ’ ট্যাকা যা কামাই হয় তাই দিয়েই কোনমত চলি। না খায়্যা থাকলেও কেউ খবর লেয় না ভাই! নিজের একটুও জায়গা নাই যে সেটি বাড়ি করে থাকমো। স্বর্ণার এমন জিবন কাহিনী সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘোরাঘুরি এক পর্যায়ে চোখে পড়ে যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার, থাকতে পারেননি এমন করুন জিবন কাহিনী দেখে। (১৮ অক্টেবর) বুধবার সন্ধায় সঙ্গে সঙ্গে স্বর্ণার কাছে ছুটে যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী ভূমি অফিসার। স্বর্ণার জিবন কাহিনী শুনে তাৎক্ষণিক স¦র্ণাকে আর্থিক অনুদান দেন এবং একটি একটি করে আবেদন করার পরামর্শ প্রদান করেন ও সরকারি ঘর পাইয়ে দেওয়ার জন্য আশ্বাস প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, স্বর্ণার জিবন কাহিনী দেখে আর বসে থাকতে পারিনাই সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়েছি স্বর্ণার কাছে। স্বর্ণাকে আর্থিক ভাবে সহযোগীতা করা হয়েছে। এবং পৃথক পৃথক ভাবে লিখিত আবেদন করার জন্য বলা হয়েছে। সরকারি সহায়তা পেলে আবারো সরেজমিনে গিয়ে স্বর্ণার হাতে সেই সহায়তা তুলে দেওয়া চেষ্টা করব।