ওয়াসিম শেখ, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে আলোচিত অটো মিশুক ভ্যান চালক চালক শাকিল (২৫) এর ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ। এ ঘটনায় দুই ঘাতককে গ্রেফতার করে রায়গঞ্জ থানা পুলিশ, গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মোঃ ফিরোজকে (২৩) ও মোঃ আশিক (১৯) ।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল ২০২৪ ইং) দুপুর জেলা পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, সে খানে আরও জানানো হয়, গত শনিবার (২১ অক্টোবর ২০২৩ইং) রাত আনুমানিক ৯ টার সময় অটো ভ্যান চালক শাকিল (২৫) জীবিকা নির্বাহ করতে বের হলে অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন তাহার অটো মিশুক ভ্যান গাড়ি বিভিন্ন এলাকার দুর্গা পূজা মন্ডপ ভ্রমন করিবে মর্মে ভাড়া করে। পরবর্তীতে অজ্ঞাতনামা আসামীরা ভিকটিম শাকিলকে হত্যা করে নদীতে লাশ ফেলে দিয়ে তাহার অটো ভ্যান গাড়িটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ভিকটিম শাকিল (২৫) সিরাজগঞ্জ জেলার শেরপুর থানার লাঙ্গলমোড়া গ্রামের মোঃ জহুরুল ইসলাম ছেলে। শাকিলকে অনেক খোঁজাখুজি করে না পেয়ে তার বাবা রবিবার (২২ অক্টোবর ২০২৩ইং) বগুড়া জেলার শেরপুর থানায় একটি জিডি করে। সোমবার (২৩ অক্টোবর ২০২৩ইং) সকাল অনুমান ১০.০০ ঘটিকায় রায়গঞ্জ থানাধীন চান্দাইকোনা ইউনিয়নের চান্দাইকোনা পূর্বপাড়া সাকিনহ মোঃ নজর আলী এর বসত বাড়ির উত্তর পার্শ্বে ফুলজোড় নদীতে শাকিলের লাশটি পাওয়া যায়। উক্ত বিষয়ে রায়গঞ্জ থানায় একটি ক্লুলেস হত্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং সন্দিগ্ধ আসামী মোঃ ফিরোজকে (২৩) গ্রেফতারপূর্বক আদালতে প্রেরণ করা হয়।
উক্ত চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সনাক্ত ও গ্রেফতারের লক্ষে সিরাজগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোঃ আরিফুর রহমান মন্ডল, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় বিনয় কুমার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, রায়গঞ্জ সার্কেল তত্ত্ব্যাবধানে অফিসার ইনচার্জ রায়গঞ্জ এর নেতৃত্বে তথ্য প্রযুক্তির সহয়াতায় তদন্তকারী অফিসার আব্দুল মজিদসহ সংগীয় অফিসার ফোর্স ঢাকার মধ্য বাড্ডা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শনিবার (২৮ এপ্রিল ২০২৪ইং) সন্ধিগ্ধ পলাতক আসামী মোঃ আশিক (১৯), পিতাঃ মোঃ বাদশা, গ্রাম-নাকুয়া, থানাঃ শেরপুর, জেলাঃ বগুড়াকে গ্রেফতারপূর্বক থানায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে উক্ত আসামী ঘটনার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং আদালতে গিয়ে নিজেকে জড়িয়ে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। আসামী মোঃ আশিক তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায় যে, সে এবং অপর আসামীদ্বয় মোঃ ফিরোজ ও মোমিন মিলে ভিকটিম আশিকের অটো ভ্যান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তারা চান্দাইকোনা বাজারে দুর্গাপূজা দেখতে গিয়ে ভিকটিম শাকিলের অটো রিক্সাটি মথুরাপুর বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভাড়া করে। মথুরাপুর বাজারে গিয়ে আসামী আশিক একটি কোল্ডড্রিংস ক্রয় করে এবং কোল্ডড্রিংস এর অর্ধেক অংশ আগে আসামীরা নিজেরা খায়, বাকি অংশের ভেতরে আসামী মোমিন চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে ভিকটিম মোঃ শাকিলকে খাওয়ায়। শাকিল উক্ত ক্লোডড্রিংস খাওয়ার পর তার চোখে ঘুম ঘুম ভাব চলে আসলে আসামী ফিরোজ শাকিলকে পেছনের ছিটে অন্যান্য আসামীদের সাথে বসিয়ে ফিরোজ নিজে গাড়ি চালিয়ে ফুলজোড় নদীর পাড়ে যায়। নদীর পাড়ে গিয়ে আসামী ফিরোজ, আশিক ও মোমিন মিলে ভিকটিম শাকিলের হাত, পা ও মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফুলজোড় নদীর পানিতে ডুবিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে আসামীরা ভিকটিম শাকিলের লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে অটো ভ্যানটি নিয়ে মোমিনের বাড়িতে চলে যায়। পরের দিন অটো ভ্যানটির রং পরিবর্তন করে আসামী মোমিন তার নিকট আত্মীয়ের কাছে বিক্রয় করে। অটো ভ্যানটি বিক্রয়ের টাকা আসামীরা নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নেয়। উক্ত ঘটনায় রায়গঞ্জ থানা পুলিশ আসামী ফিরোজকে আটক করলে আসামী আশিক ও মোমিন পালিয়ে ঢাকা চলে যায়। আসামী আশিকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির মধ্যে দিয়ে উক্ত ক্লুলেস হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচন হয়।