মোঃ ইসমাঈল হোসেন, বগুড়া সদর প্রতিনিধিঃ
অবশেষে ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হওয়া বগুড়ার করতোয়া নদী ও সুবিল খাল খনন ও সংস্কার কাজ প্রায় শেষের দিকে । সৌন্দর্য্য বাড়াতে নদী তীরে স্লোপ প্রটেকশনসহ নির্মাণ হয়েছে ওয়াকওয়ে। যদিও দখলদারদের উচ্ছেদ না করে নদীর প্রবাহ কতটুকু ফিরবে তা নিয়ে রয়েছে জনমনে নানা প্রশ্ন।সুবিল খালটি মূলত কাগজে কলমে ৬০ফুট প্রশস্ত হলেও বর্তমানে এসে ঠেকেছে ২০ ফুটে।
অবশেষে বদলে গিয়েছে বগুড়ার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে থাকা সেই করতোয়া নদী ও সুবিল খাল। বণিকের জাহাজ ভিড়ুক আর না ভিড়ুক। ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলে আবারো ভাটিয়ালী সুর ধরবে নৌকার মাঝি। বুক ভরে নির্মল শ্বাস নেবে করতোয়া পাড়ের বাসিন্দারা। ছবির মতো করে সুবিল আর করতোয়াকে সাজানোর সেই ব্যবস্থাটাই করেছে বগুড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, ৭৩০ মিটার স্লোপ প্রটেকশন কাজ, সেই সঙ্গে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ ও এর সাথে ২৭ কিলোমিটার সুবিল খাল খনন কাজও প্রায় শেষের দিকে।জনসচেতনা বৃদ্ধির মাধ্যমে সুবিল খাল খনন ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম শেষ হলে উপকৃত হবে শহরবাসীসহ বগুড়ার মানুষ।এ ব্যাপারে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আসাদুল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান চারটি প্যাকেজে সুবিল খাল খনন কার্যক্রম শুরু হলেও ইতিমধ্যে তিনটি প্যাকেজের কাজ সম্পন্ন হয়েছে একটি প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে। বগুড়া সদর উপজেলাধীন রজাকপুর ঘনপাড়া থেকে শুরু হয়ে দত্তবাড়ি পর্যন্ত সুবিল খাল ১৯.৫০০ কিলোমিটার পুনঃ খনেন প্রাক্কলিত ব্যয় ৭.৪৫ কোটি টাকা।খাল খননের গড় গভীরতা ১.৫০ মিটার হতে ২.০০ মিটার, তলার গড় প্রস্থ ২.০০ মিটার থেকে ৪.০০ মিটার,উপরের গড় প্রস্থ ১০.০০ মিটার থেকে ১৫.০০ মিটার
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক মো: তোছাদ্দেক হোসেন জানান, জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে কর্মসুচি পালন করা হচ্ছে। তরুন যুবসমাজ এ কর্মসুচির মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। আধুনিক পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে যুবকরা অগ্রনী ভুমিকা পালন করবেন বলে জানান।
করতোয়ার ১২৩ কিলোমিটারের মধ্যে ১৭ কিলোমিটার আর সুবিল ও অটো খালের ২৭ কিলোমিটার অংশ খননে এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
তবে দখল-দূষণের মধ্যদিয়ে করতোয়া ও সুবিল খালকে প্রতিনিয়ত যারা হত্যা করছে, সেই দখলদারদের উচ্ছেদ না করে কতটুকু প্রবাহ ফিরবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয়দের।
স্থানীয় একজন বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিল্ডিং এবং বিভিন্ন ব্যক্তি যারা এই করতোয়াকে দখল করেছিল, সেগুলো মুক্ত না করে সেগুলো অপসারণ না করে এই করতোয়া নদীর কীভাবে নাব্যতা ফিরে আসবে এটা আমাদের জনগণের পক্ষ থেকে প্রশ্ন রইলো।’
গত বছরের মার্চ মাসে সদরের নওদাপাড়া এলাকায় নদী দখলের অভিযোগে বেসরকারি সংগঠন টিএমএসএসের কর্মকর্তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদন্ড দিয়ে তোপের মুখে পড়েন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভীন। টিএমএসএসের মতো যারা নদী দখলে রেখেছেন তারা এখনো বহাল তবিয়তে। যদিও সেসময় দখলের কথা অস্বীকার করেছিলো সংস্থাটি।
বগুড়া টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন,আমারেদকে ক্ষতিগ্রস্থ করা হচ্ছে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আমাদের জমির সীমানা নির্দিষ্ট না করার ফলে যেটা আমাদের জমি সেটাকে নদী বলা হচ্ছে। আবার নদীর জমিতে যারা পায়ে চলার পথ সৃষ্টি করছে তাদের দায়টা আমাদের ওপর দেওয়া হচ্ছে।৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল আগামী বছরের জুনে।কিন্তু তার আগেই বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার পথে।