এম এস শ্রাবণ মাহমুদ স্টাফ রিপোর্টার।
আজ ১০ অক্টোবর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ। রোজ সোমবার বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় শুরু হলো, কঠিন চীবর দান।
বছর ঘুরে আবার ফিরে এসেছে বৌদ্ধদের মাসব্যাপী শ্রেষ্ঠত্বের, দানোত্তম কঠিন চীবর দান।
এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
১০ অক্টোবর হতে, উত্তর ডাবুয়া বেনুবন বিহার।
ভূজ পুর হরিণা অমৃতধাম বিহার।
বাঙ্গাল হালিয়া নন্দবংশ আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র।
বাঘাইছড়ি নবোদ্বয় বুদ্ধ বিহার।
লংগদু কাট্টলী নীল চন্দ্র ধর্মশক্তি বনবিহার।
রাঙ্গামাটি বন্ধুক ভাংগা খারিক্ষং সাক্ষ্য বন বিহার।
নানিয়ারচর কাট্রলতোল জ্ঞানারাম বুদ্ধ বিহার সহ অনেক জায়গায় উৎসবমুখর পরিবেশে কঠিন চীবর পালিত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় রাঙ্গামাটি সহ তিন পার্বত্য জেলাজুড়ে পুরো বাংলাদেশে বৌদ্ধ মন্দির বা বিহার গুলোতে উদযাপন করা হবে এই মহা কঠিন চীবর দান উৎসবটি।
কঠিন চীবর দানকে ঘিরে জেলার প্রত্যন্ত এলাকার বিহারে বিহারে চলছে নানা রকম আয়োজন। অনুষ্ঠান ঘিরে চলছে পাহাড়ি পল্লী গুলোতে বইছে, উৎসবের আমেজ ও অনাড়ম্বর ধর্মীয় উৎসব।
এই উৎসবে মেতে উঠেছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছাড়াও বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ।
উৎসবকে ঘিরে পথে-ঘাটে মন্দির বা কোলা হলে বসেছে মেলার আয়োজন।
বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসের ভিত্তিতে জানা যায়, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে প্রচলিত হয় দানোত্তম কঠিন চীবর দান।
তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধ গৌতম বুদ্ধের সমকালীন বিশাখার প্রবর্তিত নিয়মানুসারে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা তৈরি করা, সে সুতা রঙ করে আগুনে শুকিয়ে কোমড় তাঁতে চীবর বুনে ও সেলাই করে তথাগত গৌতম বুদ্ধকে দান করা।
বৌদ্ধ ধর্মমতে, চীবর হচ্ছে ভিক্ষুদের পরিধেয় বিশেষ রঙিন কাপড়।
যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা তৈরী করে কঠিন ভাবে চীবর তৈরী করতে হয়ে বলে তাকে কঠিন চীবর দান বলা হয়ে থাকে।
বৌদ্ধ শাস্ত্রমতে, এই কঠিন চীবর দান ষোল আনার মধ্যে এক আনাও অর্জন করা খুবই দুঃসাধ্য বলে অভিহিত।
কেননা, কঠিন চীবর দানের ফলে ইহকাল ও পরকালে স্বর্গ কিংবা নির্বাণ লাভের হেতু উৎপন্ন করা সম্ভব।
পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধরা এই উৎসব পালন করেন তৎকালীন বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে।
এই কঠিন চীবর দান অনুষ্টানটি আগামী পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত একমাস ব্যাপী বিহারে বিহারে বা বৌদ্ধ মন্দিরে আয়োজন চলবে।
বৌদ্ধ ধর্মীয় ভিক্ষুরা জানান, কঠিন চীবর দান হচ্ছে বছরের সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম দান। এ দানের ফলে পুর্ণ্যার্থীরা নির্বাণ লাভ করা সম্ভব। বৌদ্ধ ধর্মমতে নির্বাণই পরম সুখ, নির্বাণই চিরশান্তি।
সেই লক্ষ্যে নির্বাণ লাভ না করা পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই প্রার্থনায় মগ্ন থাকেন।
এ উৎসবটির মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের আগমন ঘটবে।
একদিকে মিলনমেলা রূপে ভরপুর অন্যদিকে আনন্দের আমেজ। এ উপলক্ষে ধর্মীয় কীর্তন, নাটক, চরকায় সুতা কাটা, বেইন বুনা, কল্পতরু দান এবং বর্ণাঢ্য ধর্মীয় শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।
উৎসবটি নির্বিঘ্নে সফল করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রতি বছরের মতো এই বছরেও সবধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অবগত করা হয়েছে বলে জানান বিহার বা মন্দিরের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা।
এই উৎসবকে সামনে রেখে পুরো জেলা সদর সহ বৌদ্ধ বিহারের আনাচে কানাচে নিরাপত্তা কর্মী পুলিশ ও সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সংস্থা,সহ পাশাপাশি বিহার ভলআন্টিয়ারেরা নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবেন।