ওয়াসিম শেখ, সিরাজগঞ্জ প্রতিনীধিঃ
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দেবী দুর্গা আসছেন মর্ত্যলোকে। পাল বাড়িতে তো বটেই সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরেও তাই দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। আর কিছুদিন পর শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গাপূজা। এজন্য প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সিরাজগঞ্জর মৃৎশিল্পীরা। কাদা-মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক শ্রদ্ধায় তিলতিল করে গড়ে তোলা দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা কারিগররা। এবার শহরে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা না থাকলেও আয়োজনের কোনো কমতি নেই। জেলার ৯টি উপজেলার প্রায় ৫১৬টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবু সন্তোস কুমার কানু।
সনাতনী পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার মহালয়া হবে ২৪ অক্টোবর। ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা। পরদিন ২১ অক্টোবর মহাসপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আচার অনুষ্ঠান। ২২ অক্টোবর মহাঅষ্টমী ও ২৩ অক্টোবর মহানবমী পূজা। ২৪ অক্টোবর মহাদশমী বা বিজয়া দশমী হবে। এদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পূজা ঘনিয়ে আসায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সিরাজগঞ্জর মৃৎশিল্পীরা। শৈল্পিক শ্রদ্ধায় তৈরি করছেন একেকটি প্রতিমা। শ্রাবণ নামের জগন্নাথ দেবের উৎসবের দিন থেকেই প্রতিমা তৈরিতে হাত দেন কারিগররা। মনসা পূজার পর মূল প্রতিমায় মাটির প্রলেপের কাজ শুরু করেন। কাদামাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির প্রাথমিক কাজ এখন শেষের দিকে। এরপর রং তুলির আঁচড়ে প্রতিমা পাবে দৃষ্টিনন্দন রূপ। শক্ত মাটি নরম করে দেবী দুর্গার সঙ্গে গড়ে তুলছেন কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মূর্তি। রবিবার (০৮ অক্টোবর) সিরাজগঞ্জর পালপাড়া ও বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা যায়, শিল্পীদের শৈল্পিক ছোঁয়ায় খড়, মাটি, পাট আর কাদায় তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। শুধু বাকি রয়েছে পরিপাটি করে সাজানোর কাজটুকু।
কার্তিক চন্দ্র পাল বার্তা ১০ কে বলেন, অক্টোবর মাসের ১৯ তারিখে পঞ্চমী। পঞ্চমীর রাতের আগেই আমাদের প্রতিমার সব কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য আমরা এখন খুব ব্যস্ত। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে কাজ শুরু করি কাজ চলে গভীর রাত পর্যন্ত। কাজ করতে গিয়ে আমাদের অন্য কোনো দিকে নজর দেওয়ার উপায় থাকে না। খাওয়া-দাওয়ারও কোনো ঠিক নেই।
তিনি আরও বলেন, এক মাস আগেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত ১৫টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। একটি প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে ১০-১২ দিন। প্রতিমা তৈরিতে ৪-৫ জন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করেন। একেকজন শিল্পী প্রতিমার এক এক কাজে হাত দেন। প্রতিমা তৈরির জন্য লাগে মাটি, খড়, কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা, ধানের তুষ ও কয়েক ধরনের রং।
সব মিলিয়ে যা খরচ হয় তার চেয়ে খুব একটা লাভ হয় না। এরপরও পৈত্রিক পেশা টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করছেন বলেও জানান প্রতিমা শিল্পী কার্তিক পাল।