নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁর ৬টি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন ৪৪ জন। জেলার ৬টি সংসদীয় আসন থেকে নৌকার মাঝি হতে চাওয়ার তালিকায় রয়েছে বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক দুই সচিব, বর্তমান সংসদ সদস্য ও তাদের এক সন্তানের নাম। যা নিয়ে জেলার ১১টি উপজেলাজুড়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা।

বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া বক্তব্যে এই আলোচনা আরও তীব্রতর হয়েছে। মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে প্রার্থী চূড়ান্তের পাশাপাশি কিছু বর্তমান সংসদ সদস্যকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন তিনি। দলের নীতি-নির্ধারক পর্যায় থেকে আসা এমন বক্তব্যে আশার আলো জেগেছে দীর্ঘদিন নৌকার মাঝি হওয়ার স্বপ্ন দেখা ত্যাগী নেতাদের মাঝে।

খাদ্যমন্ত্রীর আসনে নৌকার মাঝি হতে চান আরও তিনজন।

সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-১ আসন। আসনটিতে নৌকা প্রতীক পেয়ে টানা তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। আসন্ন নির্বাচনে তিনি আবারও দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে জোটবেঁধে মাঠে নেমেছেন আরও তিনজন। নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি খালেকুজ্জামান, সাবেক সদস্য রেজাউল ইসলাম ও জেলা বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য ও পোরশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক মকবুল হোসেন এবার নওগাঁ-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। তারা নৌকার মাঝি হতে জোড়ালো তৎপরতা চালাচ্ছেন কেন্দ্রে।

সাবেক হুইপের আসনে নৌকা চান আরও পাঁচজন

পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-২ আসন। আসনটিতে চতুর্থ মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন সাবেক হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার (বাবলু)। বর্তমানে জাতীয় সংসদের আইন, বিচার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে আছেন শহীদুজ্জামান সরকার। এবার তিনি ছাড়াও আরও পাঁচজন ওই আসনে নৌকার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন।

শহীদুজ্জামান ছাড়া মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া অন্য নেতারা হলেন- পত্নীতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য প্রকৌশলী আকতারুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আইয়ুব হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ রেজা মেহেদী ও জেলা তাঁতী লীগের সহ-সভাপতি ওবাইদুল ইসলাম। এই পাঁচজনের মধ্যে গত সংসদ নির্বাচনে আকতারুল ইসলাম ও আমিনুল হকের মনোনয়ন পাওয়ার জোর গুঞ্জন উঠেছিল। এবার আবারো দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে ছুটে বেরিয়েছেন এই দুজন নেতা।

দুই আমলার নজরে নওগাঁ-৩ এর নৌকা

মহাদেবপুর ও বদলগাছী উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৩ আসন। আসনটিতে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ছলিম উদ্দিন তরফদার। এরপর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে ছলিম উদ্দিনকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। তবে সেই বহিষ্কারাদেশ খুব বেশি দিন টেকেনি। ২০১৮ সালে দলে ফিরে এনে আবারো ছলিম উদ্দিন তরফদারকে নৌকা প্রতীক দেয় আওয়ামী লীগ। প্রতীক পেয়ে নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন তিনি। এবার আওয়ামী লীগ থেকে আবারো দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার। তিনি ছাড়াও এবার তার আসনে ছয়জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন।

ছলিম উদ্দিন তরফদার ছাড়া মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া অন্য নেতারা হলেন- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এনামুল কবির, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আকরাম হোসেন চৌধুরীর স্ত্রী মাহফুজা আকরাম এবং বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মাহবুবুল হক মান্নাফ।

আধিপত্য ধরে রাখতে এমপি হতে চান সাবেক মন্ত্রীর ছেলে

মান্দা উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৪ আসন। এবার এই আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, তার ছেলে শাফায়াত জামিলসহ মোট ১২ জন নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া অন্য ১০ নেতা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক রুহানী সুলতান মাহমুদ গামা, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহেল বাকী, মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাহিদ মোর্শেদ বাবু, সদস্য আবদুল মান্নান, আবদুল লতিফ শেখ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক মোল্লা, আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান রায়হান, আফজাল হোসেন ও আবুল কালাম আজাদ। এবার নওগাঁর ছয়টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন ফরম জমা হয়েছে এই আসন থেকে।

প্রয়াত আওয়ামী লীগ সম্পাদকপুত্রের বিপক্ষে নৌকা চান আরও পাঁচজন

নওগাঁ সদর উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-৫ আসন গঠিত। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিলের ছেলে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার আবারও নৌকা প্রতীক চেয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন তিনি। নিজাম উদ্দিন জলিল জন ছাড়াও এই আসন থেকে নৌকা প্রতীক চেয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন আরও পাঁচজন। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মালেক, নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শাহীন মনোয়ারা হক ও জেলা যুবলীগের সভাপতি খোদাদদ খান রয়েছেন।

নওগাঁ-৬ আসনে নৌকার কান্ডারী হতে চান ১০ জন

রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসন। ২০২০ সালে সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের মৃত্যু হয়।