আলামিন ইসলাম কয়রা, খুলনাঃ

খুলনার কয়রা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৩-১৪/২ নম্বর পোল্ডারের ৩টি স্থানে ৬শ’ মিটার বাঁধ মেরামত কাজের চুক্তি মূল্য ছিল প্রায় ৬০ লাখ টাকা। কাজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তানিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল মতিন মাত্র ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকায় শরিফুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক সরদারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। কাজটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মোট কাজের ৬০ শতাংশ সম্পন্ন করেছেন ওই শ্রমিক সরদার। এদিকে বাঁধে মাটির কাজ শেষ না হওয়ায় পাকা কাজ করতে পারছে না স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ।

পাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে কয়রা উপজেলার ৪ নম্বর কয়রা লঞ্চঘাটের দক্ষিন পাশে ২২০ মিটার, একই এলাকার স্লুইস গেটের পাশে ২২০ মিটার এবং মঠবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের পাশে ১৬০ মিটার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামত কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যশোর জেলার কেশবপুর এলাকার মেসার্স তানিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ মেরামত কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একটি প্যাকেজে তিনটি স্থানে মোট ৬শ’ মিটার বাঁধে মাটি ভরাট ও ঢালে বালুর বস্তা প্লেসিং কাজে চুক্তিমূল্য ছিল প্রায় ৬০ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩০ জুন কাজের মেয়াদ শেষ হলেও ঠিকাদারের আবেদনে ফের দুই মাস সময় বাড়ানো হয়। বর্ধিত সময় অনুযায়ী গত ৩০ আগষ্ট মেয়াদ শেষ হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান অভিযোগ করেন, বাঁধে মাটির কাজ অসমাপ্ত থাকায় সেখানে ইটের সোলিংয়ের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে ঠিকাদারকে বলা হলে তিনি মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে জানিয়ে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে পাউবো’র কর্মকর্তাকে জানালে তিনি সব ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু বছর শেষ হলেও অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা হয়নি শুক্রবার সরেজমিন কাজের স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, কোথাও বাঁধের অর্ধেক স্থানে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে, আবার কোথায় বাঁধের উপর বালুর বস্তা বিক্ষিপ্তভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। মঠবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের উত্তর পাশের বাঁধের মাটি ধুয়ে চিকন হয়ে গেছে। ওই স্থান দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ৪ নম্বর কয়রা লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাঁধে মাটির কাজ শেষে সেখানে প্রায় একশ’ মিটার ধসে বাঁধ নীচু হয়ে পড়েছে। পরবর্তিতে ধসে যাওয়া স্থানে মাটির কাজ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

৪ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ করেন, খরচ কমাতে বাঁধের ঢাল থেকে এসকেভেটর দিয়ে মাটি কেটে বাঁধ উঁচু করেছেন শ্রমিকরা। গ্রামবাসি বাঁধা দিলেও তা উপেক্ষা করেছেন তারা। যে কারণে দু’মাস না যেতেই নির্মাণ কাজের মাটি ধসে পড়েছে। বাঁধের ঢালে বালুর বস্তা দেওয়ার কথা থাকলেও না দিয়েই চলে গেছে তারা।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানিয়া এন্টারপ্রাইজের হয়ে তিনটি কাজ করেছেন কয়রা উপজেলার দশহালিয়া গ্রামের শরিফুল ইসলাম। তিনি মুঠোফোনে জানিয়েছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তিনি ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা চুক্তিতে ওই কাজের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু কাছাকাছি মাটি না পওয়ায় এবং কম টাকায় তার পক্ষে সব কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি ঠিকাদারকে জানালে তিনি আরও এক লাখ টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় কাজ শেষ করা যায়নি। এ মূহুর্তে কেশবপুর এলাকার নাছির উদ্দীন নামে এক ব্যাক্তি ওই কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন।

জানতে চাইলে নাছির উদ্দীন বলেন, কাজটি স্থানীয় একজনকে সাব কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়েছিল। তিনি সময় মতো কাজ শেষ করতে না পারায় আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল মতিন বলেন, কাজের ব্যাপারে সব কিছুই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানেন। এর বেশি আমার কিছু বলার নেই বলে ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

পাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগের উপসহকারি প্রকৌশলী সুমন আলী বলেন, কাজটি সাব কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়েছিল কিনা জানা নেই। তবে কাজের মূল ঠিকাদারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তিনি অসমাপ্ত কাজ দ্রুত শেষ করতে চেয়েছেন।

জানতে চাইলে পাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিকুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে জানা ছিল না। আপনার মাধ্যমে ঘটনাটি প্রথম জানলাম। এখন খোঁজ নিয়ে দেখে পরবর্তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।