তাহমীদ ইশাদ রিপন, বড়লেখা প্রতিনিধিঃ

হাতের নিপুণ ছোঁয়া আর মমতায় গড়ে তোলা বাগানটি দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। চারপাশের কলহের ভিড়ে এক প্রশান্তির অনুভূতি জাগে হৃদয়ে। এই শখের বাগান এবারে পূর্ণতা পেয়েছে। বাগানে ফলে ফলে ভরে উঠেছে তার লিচু, কাঠলাসহ অন্যান্য ফল।

এলাকাবাসীরা বলেছেন, তার এই ফল বাগান গ্রামের মানুষদের জন্য অনুকরনীয় হয়ে উঠেছে। তারা বাগান দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন অনেকে। স্থানীয় যুবকদের মতে মেয়র কামরানের ফল বাগান দেখে আমরাও শুরু করেছি। দু এক বছরের মধ্যে ফল পাব এই আশা করছি।

মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরীর ৬ বছর আগের সৃজিত লিচুর বাগান এখন শুধু মৌসুমি ফলের চাহিদাই মেটাচ্ছে না, দর্শনার্থীদেরও সৌন্দর্য উপভোগের স্পটে পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের দিকে বড়লেখার উত্তর ডিমাই এলাকায় প্রায় আট একর ভূমিতে কেসি এগ্রিকালচারেল লিমিটেড নামে বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী গড়ে তোলেন একটি ফলের বাগান। আম, কাঠাল, আনারস, পেয়ারা, লিচু, কমলা, মাল্টা, সফেদা, লটকনসহ পঞ্চাশ জাতের ফলের গাছের পাশাপাশি পাহাড়ের ছড়ায় মাছ চাষও করেন। এতে তিনি সফলতা অর্জন করলেও ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তত্ত্বাবধানের অভাবে কমলা, পেয়ারা ও মাল্টার গাছ মরে যায়। ২০১৭ সালের দিকে তিনি পুনরায় ফলের বাগানের দিকে ঝুঁকেন। সেখানে চায়না ৩ ও রাজশাহী জাতের সহ¯্রাধিক লেচুর চারা রোপন করেন। কর্মচারীর সাথে নিজেও নিয়মিত গাছের পরিচর্যায় নেমে পড়েন। যার কারণে মাত্র পাঁচ বছরেই লেচুর ফলন আসতে শুরু করে। গত দুই বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে তার বাগানের লিচু বাজারজাত করছেন। ইতিমধ্যে তার বাগানের লিচুর সুনামও ছড়িয়ে পড়েছে।
পৌর মেয়র কামরান চৌধুরীর লিচু বাগানের প্রধান পরিচর্যাকারী আব্দুল জলিল জানান, পৌরমেয়র তার বাগানে কখনও অত্যাধিক রাসায়নিক সার কিংবা কীটনাশক ব্যবহার করতে দেন না। স্থানীয়ভাবে তৈরী জৈব সার সরবরাহ করেন। এর ফলে গাছে দ্রুত ফলন আসে, আকারে বড় ও মিষ্টি হয়। গত বছর প্রায় ৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। এবার ফুল আসার পরই দীর্ঘ খরার কারণে অনেক লিচু ঝরে পড়েছে। তবুও ২/৩ লাখ টাকার লিচু বিক্রির আশা করছেন। গত ২৫ মে থেকে বিক্রি শুরু করেছেন। ১৫ জুন পর্যন্ত বিক্রির মতো লিচু থাকবে বলে ধারণা করছেন।
বড়লেখার পাহাড়ি ও সমতল ভূমিতে লিচুর বাণিজ্যিক চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারী পতিত ভূমিতে সঠিক পদ্ধতিতে লিচুর চাষ করা গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্ঠি ও স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাহিরে বিক্রি করে উদ্যোক্তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।

পৌরমেয়র কামরান চৌধুরী জানান, ছোটবেলা থেকেই ফলের বাগান করার শখ ছিল। তাই ২০০৮ সালে শখের বসেই পাহাড়ী এলাকায় প্রায় আট একর ভূমি ক্রয় করে কৃষিবিদদের পরামর্শ মতে গড়ে তুলেন ফলের বাগান। লাভবানও হন। কিন্তু ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নানা ব্যস্ততায় তার শখের ফলের বাগানে ভাটা পড়ে। অনেক গাছ মরে যায়। ২০১৭ সালে পুনরায় মনোযোগি হন। চায়না ৩ ও রাজশাহী জাতের লিচুর চাষ করে তিনি লাভবান হচ্ছেন। তিনি বলেন, বড়লেখায় ব্যাপক পরিমাণ সরকারী ও বেসরকারি টিলা ও সমতল ভূমি পতিত রয়েছে। এগুলোকে লিচুর বাণিজ্যিক চাষের আওতায় আনা গেলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাহিরেও বিক্রি করা যেত। এতে এলাকার আর্তসামাজিক অবস্থার উন্নতি হতো।
ইউএনও সুনজিত কুমার চন্দ জানান, পাহাড়ের ভেতর কামরান আহমদ চৌধুরীর দৃষ্টিনন্দন লিচুসহ ফলের বাগান বেকার যুবকদের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। শিক্ষিত ও বিত্তশালী বেকার যুবকরা এভাবে ফলের বাগান গড়ে তুললে মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে ভেজাল মুক্ত ফলের নিশ্চয়তা থাকবে। কেউ আগ্রহী হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।