মোঃ ওবায়েদুর রহমান সাইদ শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ
ছোট ভাইকে চাকুর মেরে হত্যা করে দীর্ঘদিন মাজারে আত্মগোপনে ছিলেন বড় ভাই। নিহতের স্ত্রীর মামলায় তদন্তে নেমে অভিনব কৌশলে ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি রাজধানীর গেন্ডারিয়ার বেগমগঞ্জ এলাকার। গতকাল সোমবার (২৫ জুন) গভীর রাতে শরীয়তপুরের নড়িয়া থানাধীন সুরেশ্বর মাজার এলাকা থেকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে গেন্ডারিয়া থানা-পুলিশ।
ঘাতক বড় ভাইয়ের নাম মো. শামীম (৩১)। নিহত ছোট ভাইয়ের নাম শাহাদাত হোসেন (২৮)। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন শামীম। সোমবার (২৬ জুন) রাতে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির ওয়ারি বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) এসএম শামীম।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর শামীম হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। জীবনে নানা হতাশা থেকে এ হত্যা করেন বলে দাবি শামীমের। প্রথমে সন্তানের হাতে আরেক সন্তান খুন এবং বাবা গুরুতর জখম হলেও মামলা করতে রাজি হয়নি পরিবার। পরে গেন্ডারিয়া থানায় মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার বৃষ্টি। গত ২৩ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর গেন্ডারিয়ার বেগমগঞ্জে ঘটে এ নির্মম হত্যাকাণ্ড। বেগমগঞ্জ লেনে জজ মিয়ার বাড়ির তৃতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন শামীমের বাবা মো. আনোয়ার। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শামীম মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে। বিভিন্ন সময় ব্যবসার জন্য বাবার কাছ থেকে টাকা নেন। মাছের ঘের, ভাঙ্গারির ব্যবসা ইত্যাদি করে বারবার লোকসানে পড়েন। এরপর থেকে বিভিন্ন স্থানে ভবঘুরের মতো থাকতেন। মাজারে মাজারে রাত কাটাতেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বাড়িতে যান শামীম। বাসায় গিয়ে দেখেন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রান্না করছেন। তাঁকে ভাত দিতে বলেন। কিন্তু মরিয়ম শ্বশুরের জন্য রুটি বানাতে ব্যস্ত ছিলেন। ভাত রান্নায় দেরি হওয়ায় ভাতের হাঁড়ি দিয়ে শামীম। ছোট ভাই খবর পেয়ে বাড়িতে আসেন। শামীম তখন চাকু নিয়ে ঘরের ভেতরে বসে দরজা লাগিয়ে দেন। শাহাদাত ও তাঁর বাবা আনোয়ার দরজা ধাক্কাধাক্কি করলে শামীম দরজা খুলে প্রথমে বাবার বুকে চাকু দিয়ে আঘাত মারেন। শাহাদাত বাবাকে বাঁচাতে গেলে তাকেও আঘাত করেন। এতে শাহাদাত ঘটনাস্থলেই মারা যান। শাহাদাতের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার বৃষ্টি বলেন, ‘আমার এক বছরের ছেলে ও আড়াই বছরের মেয়ে আছে। আমার স্বামীর ধোলাইখালে মোটর পার্টসের দোকান ছিল। এখন আমি দুই সন্তান নিয়ে কীভাবে বাঁচব! আমি স্বামীর হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।’
পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঘটনার পর পালিয়ে যান শামীম। ঢাকার মালিবাগের সুরেশ্বর মাজারে প্রথমে অবস্থান নেন। সেখানে এক পুলিশ মুরিদ সেজে গেলে টের পেরে সটকে পড়েন শামীম। চলে যান শরীয়তপুরের সুরেশ্বর মাজারে। পুলিশ সেখানেও মুরিদ সেজে গিয়ে কৌশলে শামীমকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের বিষয়ে গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, ‘ঘটনার পরই শামীম আত্মগোপন করেন। পরে আমরা রাজধানীর মালিবাগের রাজাবাগ, রামপুরার তালতলা মাজার, মিরপুরে শাহ আলী মাজারসহ বেশ কয়েকটি মাজারে যাই। এই মাজারগুলোতে সুরেশ্বর মাজারের ভক্তরা যান। পরে আমরা তথ্য পাই শামীম শরীয়তপুরে সুরেশ্বর মাজারে গেছেন। সেখানে আমরা মাজারের ভক্ত সেজে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করি।