রাজবাড়ী জেলাঃ
রাজবাড়ীতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।
২ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে শহরের কোর্ট চত্বর এলাকায় হওয়া এ সংঘর্ষে বিএনপির ২০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
পুলিশ দাবি করেছে, তাদেরও কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটপাটকেলের জবাবে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা দুটি শোভাযাত্রা বের করেন। একটি বের হয়েছে শহরের আজাদী ময়দানে অবস্থিত জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির আহ্বয়াক লিয়াকত আলী ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ।
অপর শোভাযাত্রা বের হয় শহরের সজ্জনকান্দায় জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের বাসভবনের সামনে থেকে। দুপুর ১২টার দিকে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি বের করা হয়। এতে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন। তাঁদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, পতাকার পাশাপাশি অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। মিছিলটি কোর্ট চত্বর পেরিয়ে যাওয়ার সময় নেতা-কর্মীদের একটি অংশের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে উদ্দেশ করে ইটপাটকেল ও গুলতিতে করে মার্বেল ছুড়ে মারতে থাকেন। তাঁরা সড়ক বিভাজকে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাদের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও তোরণ ছিঁড়ে ফেলেন। পুলিশও আদালতপাড়ার ভেতরে অবস্থান নিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় পিছু হটেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের বাসায় অবস্থায় নেন। পুলিশ ওই বাসা থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে বকুলতলায় অবস্থান নেয়। সেখানে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন বিএনপির কর্মীরা। পুলিশও বাসার দিকে এগিয়ে গিয়ে ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে। আধা ঘণ্টা ধরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। পরে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করবে না, এমন শর্তে নেতা-কর্মীরা বাড়ি চলে যান।
অপরদিকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের একটি অংশ রাজবাড়ী রেলস্টেশনে উপস্থিত হয়। রেলওয়ে প্লাটফর্ম সংলগ্ন রাজবাড়ী রেলওয়ে থানা। হুট করে অনেক মানুষের উপস্থিতি দেখে রেলওয়ে পুলিশ তাদের শান্তশ্লিষ্ট ভাবে স্টেশনে অবস্থান করার কথা বলেন। এক পর্যায়ে তাঁরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। ইটপাটখেল নিক্ষেপ করে। এতে রেলওয়ে থানার ওসিসহ কয়েকজন আহত হয়। পরে রেলওয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাদের ধাওয়া দেয়।
সংঘর্ষের পর বেলা সোয়া একটার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি নেতা আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম। তিনি বলেন, ‘আগে থেকে মিছিলের রুট নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মিছিলে ১০ হাজার নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করেন। মিছিলের একটি অংশ আমার বাড়িতে চলেও এসেছে। কিন্তু পেছন থেকে পুলিশ এমনটি কেন করল তা বুঝতে পারছি না।’ হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি। আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানা তিনি।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের জ্যেষ্ঠ নার্স আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ১২ পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ জন সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোমনাথ বসু বলেন, ‘আমি রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। আমার চোখে আঘাত লেগেছে। আমাকে ফরিদপুর চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হামলায় আমার এক নারী সহকর্মীসহ আরও চারজন আহত হয়েছে। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।’
রাজবাড়ী জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ সালাউদ্দিন বলেন, পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা রাস্তায় থানায় বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ভাংচুর করে। রাস্তায় একটি অরাজকতা সৃষ্টি করে। পুলিশ জানমাল রক্ষায় ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। বিএনপির হামলায় আহত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
জানাজায়, হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।