আহসান হাবীব নাহিদ, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি :

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের অবৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অধীনে কোটি টাকার বিনিময়ে অধ্যক্ষ, ল্যাব সহকারী ও চতুর্থ শ্রেনির কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে,জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ সমুহে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত স্মারক নং ০৭(১৫২৫) জাতীঃবিশ্বঃ/ কঃপঃ/৫৪৬১৪ ০১/১১/২০২১ ইং ও স্মারক নং: ০৭(১৫২৫) জাতীঃ বিঃ/ কঃ পঃ/৫৯৪০৯ প্রণীত পৃথক নীতিমালায় বলা হয়েছে একজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ৬ মাস কিংবা বিশেষ যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে ১ বছরের অধিক কেউ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। কিন্তু বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ হাফিজুর রহমান তা লঙ্ঘন করে ১ বছরের স্থলে দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর ধরে অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।এমতবস্থায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ওই কলেজের সর্বােচ্চ জ্যেষ্ঠতম সহকারী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন যোগ্যতা সাপেক্ষে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য গত ১০/০৫/২০২৩ ইং তারিখে অত্র কলেজের গর্ভণিং বডির সভাপতি বরাবরে লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু বিষয়টি আমলে না নেওয়ায় সহকারী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন মন্ডল এবিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টে ভাইস চ্যান্সলরসহ বেশ কয়েকজন কে বিবাদী করে একটি রীট পিটিশন রুজু করেন।

মহামান্য হাইকোর্টের রীটের আলোকে গর্ভনিং বডির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না মর্মে রুল ও নির্দেশনা দেয়। এছাড়া রীটটি নিস্পতির জন্য ভাইস চ্যান্সেলর কে দুই মাসের মধ্যে নিস্পতি করার জন্য নির্দেশনা দেয়।

রীট নির্দেশনার আলোকে গত ১৯ /০৯/২০২৩ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার রীটকারী ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কে তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দু,পক্ষের মধ্যে শুনানী করেন। কিন্তু এ পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোনরকম সিদ্ধান্ত না নেওয়ার সুযোগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও সভাপতি সকল বিধি নিষেধ অমান্য করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ নিয়োগ কার্যক্রম চালাতে থাকেন।

নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার তড়িঘড়ি করে গাইবান্ধা সরকারী কলেজে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় অধ্যক্ষ ব্যতীত সকল নিয়োগ প্রত্যাশীদের লোকদেখানো পরীক্ষা গ্রহন করা হয়। তবে নিয়োগ প্রত্যাশী অনেকেই আক্ষেপ করে বলেন,সভাপতি ও অবৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের প্রথম করে নিয়োগ দিবেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।

এর আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও সভাপতির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের পায়তারাসহ সীমাহীন অনিয়ম দূর্নীতির চিত্র তুলে ধরে ওই কলেজের অভিভাবক ও স্থানীয় সচেতন মহল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর,মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করা হয়। কিন্তু অদ্যবধি তারা কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করেননি।

শুধু তাই নয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রণীত নীতিমালা অনুসারে অবৈধভাবে দায়িত্ব পালনকারী হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে খোদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সলর বরাবরে এসংক্রান্ত অভিযোগ করা হয়। তিনিও এব্যাপারে কোন বিধিগত পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্থানীয় বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা অভিযোগ করে বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রণীত নীতিমালা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কোন গুরুত্ব নেই।

এছাড়া নিয়োগ বন্ধের জন্য স্থানীয় প্রায় ৭০ জন অভিভাবক ও সচেতন ব্যক্তিবর্গ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাচালকের প্রতিনিধি গাইবান্ধা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ বরাবরেও লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।তিনিও অভিযোগ আমলে না নিয়ে মোটা অংকের টাকার চুক্তিতে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহন করেন।

এদিকে স্থানীয় সুত্র জানায় নিয়োগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ভাবেই নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ না করায় ওই কলেজের দাতা পরিবারের আব্দুর রউফ ও একজন অভিভাবক বাদি হয়ে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা রুজু করেন। মামলার বাদি আব্দুর রউফ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলা করা হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত ওইদিন কোন আদেশ দেননি। আমি আশাবাদি অবৈধ অধ্যক্ষের অধীনে এ নিয়োগ বাতিল হবে। বাদি পক্ষের আইনজীবি এনতাজ আলী বলেন,অবৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অধীনে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত চেয়ে মামলা করা হয়েছিল। মামলার শুনানী হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত আদেশ না দেয়ায় তারা পরীক্ষা নিয়েছে। রুজুকৃত এমামলায় পরবর্তী সময়ে নিয়োগ পরীক্ষা চ্যালেজ্ঞ করা হবে। ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ প্রত্যাশী কায়েস আহাম্মেদ রাঙা ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ প্রত্যাশী রবিন বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও সভাপতি যোগসাজসে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগের রাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের মধ্যে ফাঁস করে দিয়ে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছেন। আমরা টাকা দিতে না পারায় আমাদের ভাগ্যে চাকুরি জোটেনি। বিদ্যমান এপরিস্থিতিতে নিয়োগ বঞ্চিতরা নাটকীয় এ নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।