বিপুল রায়-কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে এক মুসলমানের বাড়িতে মন্দির নির্মাণ করায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে চলমান আলোচনার এক পর্যায়ে ওই বাড়িতে হামলা হয়েছে। এ সময় ভাঙচুর করা হয়েছে মন্দিরটি। খুলে নেওয়া হয়েছে প্রতিমার গায়ে জড়ানো কাপড় ও প্রদীপ। পুড়ে ফেলা হয়েছে ঘরটির বেড়া।

নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী আজমাতা নাড়ির ভিটা গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন– পার্শ্ববর্তী আশকর নগর গ্রামের আবদুল কাদের হাফেজ, একরামুল হক ও মো. আলামিন স্থানীয়রা জানান, মুসলমান অধ্যুষিত গ্রামটিতে গুটিকয়েক হিন্দু পরিবার বসবাস করে, তাদের সঙ্গে কারও বিবাদ নেই। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় আছে। বিতর্কটা তৈরি হয়েছে জাহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে নিয়ে। তিনি তার বাড়িতে হিন্দুদের মন্দির করেছেন। বিষয়টি স্থানীয় মুসলমানরা মেনে নিতে পারছেন না। এজন্যই হামলা-ভাঙচুরের মতো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। তবে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘদিন জটিল রোগে ভুগছিলাম। অনেক চিকিৎসা করেও ফল পাইনি। সম্প্রতি এক কবিরাজের পরামর্শে বাড়ির পাশে হিন্দুদের মনসা দেবীর মন্দির করার জায়গা দিয়েছি। এর পর ধীরে ধীরে আমি সুস্থ হয়ে উঠি। বৃহস্পতিবার দেবীর ঘরের জায়গাটুকু মন্দিরের নামে রেজিস্ট্রি (দলিল) করে দিতে চেয়েছিলাম। বিষয়টি নিয়ে গ্রামের মুসলমানদের সঙ্গে ঝামেলা হয়। এক পর্যায়ে ৭০ থেকে ৮০ জন লোক আমার বাড়িতে হামলা চালায়। মন্দির ভাঙচুরে বাধা দেওয়ায় তারা আমাকেও আঘাত করেছে। এ ঘটনায় আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ে আছি।

স্থানীয় অনিল চন্দ্র বলেন, এলাকায় হিন্দু-মুসলমান কোনো বিবাদ নেই। ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমনটা হয়েছে। মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি সফিস চন্দ্র বর্মণ বলেন, উত্তেজিত লোকজন আমার বাড়িতেও হামলা করেছে। তারা একটি ঘরে ভাঙচুর চালিয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সমস্যাটি সমাধান করায় থানায় অভিযোগ করিনি।

এবিষয়ে নাগেশ্বরী থানার ওসি আশিকুর রহমান বলেন, এটা মন্দির ঠিক না, একটা দেবীর ছোট বেদী। জাহিদুলের বাড়িতে এটি স্থাপন করায় গ্রামের মুসলমানরা তার ওপর চটেছেন। আমরা বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছি। এর পেছনে আরও কোনো কারণ আছে কিনা জানার জন্য তিনজনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।

কুড়িগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রবি বোস বলেন, মন্দিরটি ভাঙচুরে জড়িতদের দ্রুত শাস্তি দাবি করছি। একই সঙ্গে হিন্দু ভাইবোনদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেছি। এক সপ্তাহ পর দুর্গোৎসব, কোনো ফাঁদে পা দিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা যাবে না।

পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, এটা হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম নয়। তাছাড়া মন্দিরের আশপাশে আধা কিলোমিটারের মধ্যেও কোনো হিন্দু বসবাস করেন না। তাই সমস্যাটি নিছক মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ।