ওয়াসিম শেখ, সিরাজগঞ্জ প্রতিনীধিঃ
অসাধু ব্যবসায়ী চক্র ও সিন্ডিকটধারীদের কারণে দ্রব্যমুল্যের বাজার আজ অস্থিত।এযেন দেখার কেউ নেই! ভোক্তা অধিকারের কর্তাব্যক্তিরা মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান দিলেও কার্যত তা কোন কাজেই আসছে না। ফলে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সিরাজগঞ্জের নিম্নআয়ের মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমুল্যের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। বর্তমানে সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। দ্রব্য বা সেবার ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়াই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সম্প্রতি চাল, ডাল, তেল, আটা, ডিম, আলু, আদা, রসুন, পেয়াজ, চিনি, মসলা ও সবজি থেকে শুরু করে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কোনোভাবেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের লাগাম টানা যাচ্ছে না। এতে করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে চরম দুর্দশা দেখা দিচ্ছে।
শনিবার (২১ অক্টোবর ) সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের বাজারসহ জেলার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় সব দ্রব্যমূল্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে যতো দিন যাচ্ছে বাজারে ততোই দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়ছে। দাম না কমায় বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ। তবে সিন্ডিকেট ভাঙ্গলে সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ সব সবজির দাম নাগালের মধ্যে চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন ক্রেতা- বিক্রেতারা।
তথ্য সূত্রে থেকে জানা যায়, প্রতিনিয়তই চাল, ডাল, আটা, তেল, ডিম, আলুসহ সকল প্রকার নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ২০২০ সালে সয়াবিন তেল প্রতি কেজির পাইকারি দাম ছিল ৮৮ টাকা,২০২১ সালে ১১৫ টাকা ও চলতি বছর ১৬৯ টাকা। ২০২১ সালে মোটা মসুর ডালের দাম ছিল কেজি ৬৮ টাকা, ২০২২ সালে ১১০ টাকা। ২০২১ সালে দেশি মসুর ডালের দাম ছিল ৯২ টাকা, বর্তমানে ১৪০ টাকা। ২০২১ সালে বিদেশি চিনির দাম ছিল ৫৬ টাকা, বর্তমানে ১৩০ টাকা। ২০২১ সালে আটার দাম ছিল ২২ টাকা ২০২২ সালে ৩০ টাকা বর্তমান ৪৫ টাকা । ডিম হালি ৫০ টাকা, ২০২২ সালে ছিল হালি ২৪-২৮ টাকা, জিরা কেজি ১২০০ টাকা, যা ২০২২ সালে ছিল কেজি ৪০০ টাকা।
সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে,গোল আলু, টমেটো, বেগুন, করলা, পটল, লাউ, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙ্গা, কচুরলতি, ঢেঁড়শ, লাউশাক, পালং শাক, মুলার শাক, কলমি শাক, কচু শাকসহ সবধরনের সবজির বাজার চড়া। ঝিঙ্গা ৬০, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১০০, বেগুন ১০০, শসা ৫০, কাঁচামরিচ ২৫০-২৮০, রসুন ২৬০, গোল আলু ৫০, দেশি আদা ২৬০, কাঁচা পেঁপে ২০-২৫, ঢেঁড়শ ৮০, কচুর লতি ৮০, কাচ কলা প্রতি হালি ৩০, গাজর১৬০ , টমেটো ১২০, পটল ৫০, করলা ১০০, কচু প্রতিটি ৩০-৪০ এবং কচুরমুখি ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজি বিক্রেতা বাবলু বলেন, সকল প্রকার সবজির দাম বাড়তি। বেশী দাম দিয়ে কিনে আনি বলেই বেশী দামে বিক্রি করি। তবে সিন্ডিকেটের কারসাজি মুক্ত হলে সকল প্রকার সবজির দাম কমে যাবে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাছ বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বড় রুই ৩০০-৩৫০, মাঝারি রুই ২৫০-২৭০, কাতল ৩০০-৪০০, বড় পাঙ্গাশ ২০০-২৫০, পাবদা ৪০০, গলদা চিংড়ি আকারভেদে ৬৫০-৭৫০ ও শিং ৪৫০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট, মাঝারি, বড় ইলিশ যথাক্রমে ৮০০, ১০০০ ও ১২০০, ১৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঁচকি মাছ ৪০০ ও মলা মাছ ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাটা মাছ ২০০-২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এসব মাছই খুচরা বাজারে ১০০-১৫০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।
বাজার দরের ব্যাপারে অনেকে মনে করেন, বর্তমানে ব্যবসা চলে গেছে সিন্ডিকেটধারীদের হাতে। তারা শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকে কখন দাম বাড়ানো যায়। সারাদেশের ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করছে। তারা মনে করে সঠিকভাবে বাজার মনিটরিং করলে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।