রাজবাড়ী জেলা ঃ
রাজবাড়ীর অদম্য মেধাবী এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রথম আলোতে প্রতিবেদনের পর তার পাশে দাঁড়িয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি)। ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে ওই শিক্ষার্থীর হাতে এক সেট নতুন বই তুলে দেওয়া হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (প্রশাসন ও অর্থ) রেজাউল করিম। মুঠোফোন উদ্ধার ও বাইসাইকেল রাইডারেদের সংগঠিত করায় জেলায় তাঁর খ্যাতি রয়েছে।
ওই শিক্ষার্থীর নাম সাদিয়া সুলতানা শান্তা। সাদিয়া এবারের এসএসসি পরীক্ষায় রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এখন রাজবাড়ী সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নরত। তার বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের চরখানখানাপুর গ্রামের দত্তপাড়া। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সাদিয়া সবার বড়। তাঁর ভাই সাব্বির ব্যাপারী রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও বোন সামান্তা সুলতানা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা রিকশা শ্রমিক।
সাদিয়া সুলতানা শান্তা জানায়, তারা তিন ভাইবোন পড়ালেখা করে। বাবার আর্থিক অনটন রয়েছে। কলেজে ভর্তি হলেও বই কেনা হয়নি। লাইব্রেবী থেকে বই নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কারণ কলেজে আসতে প্রতিদিন বাস ভাড়া দিতে হয় ৪০ টাকা। বাকী পথ পাঁয়ে হেঁটে চলাফেরা করে। তাঁর স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়া। ২০১৯ সালে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় তার দাদা সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়। বাবার আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা করতে পারে নাই। পরে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি মারা যান। তখন থেকেই আমার চিকিৎসক হওয়ার খুব ইচ্ছে। আমার দাদার মতো অন্য কেউ যেন চিকিৎসা না পেয়ে মারা না যায়।
সাদিয়ার মা সাগরিকা বেগম জানিয়ে ছিলেন, সাদিয়া রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। ভর্তিও সুযোগ পায়। জেলার সবচেয়ে ভাল স্কুল হিসেবে পরিচিত স্কুলে ভর্তি হয়। কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় প্রতিদিন অনেক কষ্ট করে স্কুলে যেতো। প্রতিদিন তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে খানখানাপুর রেলস্টেশন। এরপর ট্রেনে রাজবাড়ী রেলস্টেশন। ট্রেন থেকে নেমে আবারও পায়ে হেটে স্কুলে। স্কুলের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতো। একারণে মাঝেমধ্যে রাত হয়ে যেতো। প্রথম প্রথম খুব ভয় পেত। অনেক দিন সকালে না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হতো। সারাদিন না খেয়ে থাকতো। এরপর শুকনো মুখ নিয়ে বাড়ি ফিরতো। ক্লান্তি থাকায় বাড়ি এসে সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে পড়তো। গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে পড়া শুরু করতো। কখনো ও স্কুল কামাই করে নাই।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রেজাউল করিম বলেন, আমি ছোটবেলায় খুব আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়ালেখা করেছি। আমিও ঠিকমতো খাতা-কলম কিনতে পারি নাই। এই কষ্ট আমি বুঝি। আমি জানি এই পরিস্থিতিতে মানুষ কতটা অসহায় থাকে। আমার কাছে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন দেখার পরেই মনে হয়েছিল তাকে হেল্প করা উচিত। বিবেকের তাড়নায় আমি ওই পাশে আছি। আমি তাকে আমার সাধ্যমতো সহায়তা করবো।
৪ অক্টোবর প্রথম আলোতে ৭ পৃষ্টায় ‘বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে চলছে ওরা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।