মোস্তফা কামাল মামুন, জেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রামঃ

কুড়িগ্রামে পুলিশের চাকরি পেল ভিক্ষুকের ছেলে এতিম হাসানুর রহমান।
সে জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার সুখাতি বোর্ড ঘর এলাকার মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত হাসানুর রহমান (১৯)।
সে নাগেশ্বরী পৌর শহরের কলেজপাড়া এলাকার গোলাপ খাঁ শিশুসদন কেন্দ্রে (এতিমখানা) বড় হয়েছেন। স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এসএসসি, নাগেশ্বরী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে অনার্সে ভর্তির জন্য আবেদনও করেছেন।

এক বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে হাসানুর দ্বিতীয়। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে, স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন তিনি। পুলিশের চাকরি পেয়ে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে হাসানুর বলেন,  আমি কখনও কল্পনাও করতে পারি নাই আমি পুলিশ হবো।

হাসানুর বলেন, ‘আমার বাবা ভিক্ষা করতো, আর মা করতো রাজমিস্ত্রীর কাজ। অভাবের তাড়নায় আমায় রেখে দেয় এতিমখানায়। হঠাৎ একদিন আমার বাবা মারা যায়। পরে আমার মা বিয়ে করে চলে যায় অন্য জায়গায়। চিন্তায় ভেঙে পড়ি আমি।

কী হবে আমার, কে দেখবে আমাকে।’ এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত হাসানুর রহমান। তিনি আরো বলেন,
আমি দীর্ঘ ১৩-১৪ বছর থেকে এতিমখানায় লালিত-পালিত হয়েছি। আমার বড় বোনও সেখানে মানুষ হয়েছে। আজ যদি আমার বাবা বেঁচে থাকতো, তাহলে কতই না আনন্দিত হতো।

উলেখ্য কুড়িগ্রামে আরও ৫১ জন নারী-পুরুষের চাকরি হয়েছে কনস্টেবল পদে। তারাও চাকরি পেয়ে আনন্দিত। আজ বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার ও টিআরসি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নাম ও ফলাফল ঘোষণা করেন। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের ফুলেল শুভেচছা ও অভিনন্দন জানানো হয়।

এ সময় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অনেকে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।

পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম তার বক্তব্যে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের অভিনন্দন জানান। তিনি সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দেশসেবার মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কাজ করার প্রেরণা ও প্রেষণা প্রদান করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য নীলফামারী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আরআরএফ রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মতিউর রহমান, জেলা পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রার্থী ও তাদের অভিভাববৃন্দ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রাম জেলার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল ৫২ জনের শূন্য পদের বিপরীতে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং শেষে দুই হাজার ৩০০ জনেরও বেশি সংখ্যক প্রার্থী শারীরিক মাপ ও সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। যাচাই শেষে ৫৭৭ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরে লিখিত পরীক্ষায় ২৬৮ জন উত্তীর্ণ হয়ে মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা দেন।

কুড়িগ্রাম জেলা টিআরসি নিয়োগ বোর্ড চূড়ান্তভাবে পুরুষ সাধারণ ২৬ জন ও নারী পাঁচজন, মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় পুরুষ ১৩ জন ও নারী দুজন, পুলিশ পোষ্য কোঠায় পুরুষ চারজন ও নারী একজন এবং এতিম কোঠায় পুরুষ একজনসহ সর্বমোট ৫২ জনকে মনোনীত করে।