মোঃ ফিরোজ আহমেদ, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ

নওগাঁয় সুমি (৩০) খাতুন নামে এক প্রসূতি নারীর পেটে গজ রেখেই সেলাই করে দিয়েছিলেন এক চিকিৎসক। ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে পড়া ওই নারীকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে পুনরায় অপারেশনের পর পেটের ভেতর থেকে বের করা হয় রক্ত পরিষ্কার করা গজ কাপড়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী উজ্জল হোসেন।

বর্তমানে সুমিকে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আর সদ্যজাত বাচ্চাকে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। গত বুধবার সকালে শহরের একতা ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। সুমি খাতুন জেলার আত্রাই উপজেলার বান্দাইখাড়া এলাকার উজ্জল হোসেনের স্ত্রী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৫ মে প্রসব ব্যথা শুরু হলে শহরের হাসপাতাল রোড এলাকায় অবস্থিত একতা ক্লিনিকে নেয়া হয় ওই প্রসূতি নারীকে। সেখানে ওই দিনই সিজার করান প্রসূতি বিদ্যা ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার তানিয়া রহমান তনি। সরেজমিনে গিয়ে ক্লিনিকের রেজিস্টার খাতা দেখেও সত্যতা পাওয়া যায়। সিজারের জন্য জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া (জি.এ) প্রয়োগ করেন ডাক্তার তানিয়ার স্বামী নওগাঁ সদর হাসপাতালের অ্যানেসথেসিওলজীস্ট ডাক্তার আদনান ফারুক। সিজারের পরই ওই নারী তার পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন এবং প্রচুর পরিমানে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ডাক্তার তানিয়া ক্লিনিকের মার্কেটিং অফিসার আবদুর রউফকে দিয়ে দ্রুত রোগির পেটে সেলাই করিয়ে নেয়।

তারপর গত বুধবার রাত ১০টার দিকে কৌশলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর রাতেই আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে জানা যায় তার পেটে বাড়তি কিছু একটা জিনিস রয়েছে। আর সেটার জন্য তাকে বৃহস্পতিবার সকালে পরিবারের সম্মতিতে ফের অপারেশন করার পর পেট থেকে গজ পাওয়া যায়। ভুল অপারেশন ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সংকটপূর্ণ অবস্থায় বর্তমানে তাকে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

ভুক্তভোগী নারীর স্বামী উজ্জল হোসেন বলেন, ডাক্তার তানিয়া সিজার করার পর পেটেই গজ রেখেছিল। আবার হাসপাতালের মার্কেটিং অফিসারকে দিয়ে কিভাবে পেটে সেলাই করিয়ে নেয়। তিনি তো এ বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়। রক্তক্ষরণও বন্ধ হচ্ছিল না। কৌশলে রাজশাহীতে রেফার করে। আমার স্ত্রীর অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। আমরা এর বিচার চাই। বর্তমানে আমরা রাজশাহীতে রয়েছি। আমরা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে।

একতা ক্লিনিকের মার্কেটিং অফিসার আবদুর রউফ বলেন, ডাক্তার তানিয়া আমাকে যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছিল সেভাবেই আমি সেলাই করেছি। আপনি কি এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কিনা বা এটা আপনার কাজ কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো স্বদউত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ডাক্তার তানিয়া রহমান তনিকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, চেম্বারে রোগি দেখছি ৫ মিনিট পর আপনাকে কলব্যাক করছি বলে এই প্রতিবেদকের নাম্বার ব্লাকলিস্টে রাখেন। পরে অন্য আরেকটি নাম্বার থেকে ফোন করা হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।

ডাক্তার তানিয়ার স্বামী ডাক্তার আদনান ফারুককেও একাধিকবার ফোন করা হলে তিনিও ফোনকল রিসিভ করেননি।

ক্লিনিক মালিক মাসুদুর আলম (আগা) বলেন, ঘটনার জন্য আমরা দায়ী নই। যে ডাক্তার এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের সঙ্গে কথা বলুন। আপনার ক্লিনিকে সিজার করার সময় এমন ঘটনা ঘটেছে এবং ডাক্তারকে আপনি নিয়ে এসেছেন রোগির সিজার করানোর জন্য। তাহলে আপনার এখন করণীয় কি ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন রোগীর জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিবা করতে পারি।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে সিভিল সার্জন ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আপনার কাছ থেকে আবগত হলাম। আমরা খোঁজ নিয়ে অবশ্যই দেখবো। আর রোগীর অভিভাবক কেউ যদি অভিযোগ করেন তাহলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।