মোঃ ওবায়েদুর রহমান সাইদ শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের শৌচাগার থেকে বাবু বেপারী (৪০) নামে এক রোগীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার (১৩ জুলাই) সকালে হাসপাতালের তৃতীয় তলার শৌচাগার থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।বাবু বেপারি বরিশালের মুলাদি উপজেলার তয়কা সেলিমপুর এলাকার মোঃ আলী বেপারীর ছেলে বলে আমাদেরকে জানান।গত বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, এরপর ঐদিন রাত ১টার দিকে তিনি হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে নিখোঁজ হন।সদর হাসপাতাল নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (১১ জুলাই) বাবু বেপারী অসুস্থ হলে তাকে গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তৃতীয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
ওই দিন দিবাগত রাত ১টার দিকে বাবু বেপারী বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে আর ফিরে আসেন নি, বাবুর সঙ্গে থাকা তার মা রোকেয়া বেগম (৮০) বলেন,আমি নার্সদের বিষয়টি জানালেও তারা খোঁজার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পরে তার মা রোকেয়া দিশেহারা হয়ে ছেলেকে খুজঁতে পরদিন শুক্রবার (১২ জুলাই) গ্রামে বাড়ি ফিরে যান।
তখন খবর পেয়ে অন্য স্বজনরা সদর হাসপাতালে ছুটে যান। তারাও বাবু বেপারীর কোনো সন্ধান না পেয়ে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে জানায়। এরপরও তারা কোনো সহায়তা পায়নি বলে জানান।আজ শনিবার (১৩ জুলাই) সকালে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় এক রোগী মেডিসিন ওয়ার্ডের গোসলখানায় এক ব্যাক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে নার্সদের জানান, তখন বাবুর স্বজনরা বাবুর লাশ বলে সনাক্ত করেন।দায়িত্বরত নার্সরা বিষয়টি পালং মডেল থানার পুলিশকে জানান। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।নিহত বাবুর মা রোকেয়া বেগম বলেন ‘অসুস্থতার পর আমার ছেলেটারে নিয়া শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে আইছি। টয়লেটে যাওয়ার কথা কইয়া পোলাডারে আর পাই না। পোলাডারে খুইজ্জা না পাইয়া নার্সেগো জানাইছি। পাগলের মতো খুজ্জি পোলাডারে কোন হানে পাই নাই। নার্স ও হাসপাতালের লোকেরা অবহেলা করছে। হেরা যদি দায়িত্ব লইয়া খুঁজতো আগে তাইলে হয়তো বাজান মরত না। পরে তো খুঁইজ্জা পাইয়া দেখি বাজান আমার বেচে নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হাবীবুর রহমান আমাকে বলেন, ওই রোগী উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তার হৃদরোগের সমস্যা ছিল। কেউ খেয়াল না করায় হয়তোবা হৃদরোগের কারণে গোসলখানায় গিয়ে তার মৃত্যু হয়।নার্সদের অবহেলার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রায়ই রোগীরা দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও নার্সদের না জানিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান। এ ক্ষেত্রেও এমনটা ভেবে নিখোঁজের বিষয়টি হয়তো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যেহেতু হাসপাতালের গোসলখানা থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে সেক্ষেত্রে মনে হচ্ছে, দায়িত্ব যারা পালন করেছেন তাদের অবহেলা ছিল। এখন এই ঘটনার জন্য একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর জড়িতদের বিষয়ে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শরীয়তপুর পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতাল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।