মো. নাহিদুল ইসলাম ফাহিম, রাজবাড়ী :
গত কয়েকদিন যাবৎ দেশে বয়ে যাচ্ছে এক প্রতিকূল আবহাওয়া। আকাশ থাকছে কালো মেঘে ঢাকা৷ থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি। আবার মাঝে মাঝে ঝড়ছে মুশলধারেও। যার কারণে অতিপ্রয়োজনীয় কাজ না থাকলে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না মানুষজন। বাজারের বিভিন্ন পণ্যের দোকানেও নেই ক্রেতাদের ভীর। যার ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশে পরিণত হয়েছে এই মেঘ ও বৃষ্টিময় আবহাওয়া।
দেশে বহমান নিম্নচাপের ফলে রাজবাড়ীতেও গত বুধবার থেকে বয়ে চলেছে এরূপ আবহাওয়া। হচ্ছে থেমে থেমে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি। ভারী বৃষ্টিও হয়েছে টানা দেড়দিন মতো। টানা ৩ দিনের এ বৃষ্টিতে বাজার-ঘাটে তেমন ছিল না জনসাধারণের ভীর। ছিল ক্রেতার স্বল্পতা। যা ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের জন্য।
বর্তমানে অধিকাংশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ঝুকেছে গ্রীষ্মকালীন ফল আম ও লিচুর দিকে। যা একেবারেই স্বল্প সময়ে পচনশীল ফল। গত কয়েকদিনের বৈরী আবহাওয়ায় বাজারে ক্রেতার সংকটের কারণে মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীদের অধিকাংশ ফল বিক্রি হওয়ায় ধরেছে পচন। যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে রয়েছেন এ সকল ব্যবসায়ীরা। আড়ৎদারেরা জানান গত কয়েকদিনে প্রত্যেকটি আড়ৎ থেকে গড়ে আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকার ফল নষ্ট হয়ে গেছে৷
রাজবাড়ী ফল বাজারের খুচরা ফল ব্যবসায়ী মো. হারুন সরদার বলেন, বর্তমানে চলছে দেশীয় জাতসহ বিভিন্ন ধরনের আম, জাম ও লিচুর মৌসুম। আমরা বেশ কিছুদিন যাবত আম বিক্রি করছি। গড়ে প্রতিদিনে আমার প্রায় এক’শ থেকে এক’শ বিশ কেজি মতো আম বিক্রি হয়। তবে গত কয়েকদিনের প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বাজারে ক্রেতা কম থাকায় গড় বিক্রি ছিল মাত্র ২০ থেকে ত্রিশ কেজি৷ এতে বিক্রির জন্য কিনে রাখা অধিকাংশই আমগুলোই পচে গেছে৷ কয়েকদিনের প্রায় পুরো চালান নষ্ট হওয়ায় অনেক টাকার ধাক্কার সম্মুখিন হয়েছি এই ঈদ পূর্ববর্তী সময়ে।
আরেক ফল ব্যবসায়ী মো. সুলতান আহম্মেদ বলেন, সিজনের স্বাভাবিক সময়ে আমরা দিনে ১শ থেকে দেড়’শ কেজি মতো বিভিন্ন জাতের আম বিক্রি করে আসছি। তবে একই পরিমাণ আম কিনে টানা বৃষ্টিতে তা বিক্রির পরিমাণ কমে এসেছিল প্রায় ৪ ভাগের ১ ভাগে। বাকি ফলগুলো নষ্ট হওয়ার ভয়ে কেনাদামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেও এই আবহাওয়ায় ক্রেতার অভাবে তা বিক্রি করা সম্ভব হয় নি। ঝুড়ি ধরা বাকি সব আম পচে গেছে আমার।
রাজবাড়ী ফল বাজারের পাইকারি ফল বিক্রয় প্রতিষ্ঠান চৌধুরী বাণিজ্য কেন্দ্র। বর্তমানে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফল আম সংরক্ষণ করে বিক্রি করছেন তিনি। দেশীয় জাতের আমসহ, হিমসাগর ও ল্যাংড়া জাতের আম মজুদ ছিল তার আড়তে। এ মৌসুমে স্বাভাবিক সময়ে গড়ে প্রতিদিন দেড়’শ থেকে ২’শ মণ আম খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি হয় তার। তবে বৃষ্টির কারণে টানা ৩ দিন কোনো আম বিক্রি হয়নি তার আড়ৎ থেকে।
চৌধুরী বাণিজ্য কেন্দ্রের স্বত্বাধিকারী চৌধুরী ইমরুল আহম্মেদ বলেন, গত কয়েকদিনের বৈরী আবহাওয়ায় ক্রেতার অভাবে খুচরা পর্যায়ে ফল বিক্রি না হওয়ায় আমাদের আড়তে কোনো ফলই বিক্রি হয়নি। মৌসুমি ফলগুলো দ্রুত পচনশীল হয়ে থাকে। তাই কয়েকদিন সংরক্ষিত থাকায় সেসব আমে পচনধরে আমগুলো বিক্রির অযোগ্য হয়ে পরেছে৷ বাধ্যহয়ে সেসব আম ফেলে দিতে হয়েছে৷ গত ৩ দিনে আমার প্রায় ৩ লাখ টাকার আম পচন ধরে নষ্ট হয়ে গেছে৷