সঞ্জয় দাস, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:

যুদ্ধ-বিগ্রহ, বন্যা-খরা, কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিয়ে যে শস্কার ধ্বনি বাতাসে ভাসছে, তার মধ্যে আমন মৌসুমে দারুণ ফলনের আভাস দিচ্ছে স্বস্তির ইঙ্গিত।

সীমান্ত ঘেষা তিস্তা নদীবেষ্টিত নীলফামারী ডিমলা উপজেলা। এ উপজেলার বিস্তীর্ণ দিগন্ত জুড়ে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকগণ সঠিক সময়ে আমন ধানের চারা রোপণ ও পরিচর্যার কারণে দিগন্ত জুড়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। ধানের ভালো দাম পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন তারা। বাজারে ধানের দামও ভালো ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকা মণ। আর এতে কৃষক বেজায় খুশি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এবার উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে ২৩ হাজার ৪ শত ৩৮ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। তারমধ্যে স্থানীয় জাতের ধান ১৮৭ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের ধান ৫ হাজার ২ শত হেক্টর এবং উফশী জাতের ১৫ হাজার ৫২ হেক্টর জমিতে বিনা-৭, বিনা-১৬, বিনা-১৭, বিনা-২০ ও ব্রি-ধান-৭৫, ব্রি-ধান-৮৭ এবং কালোজিরা-ধান কর্তন করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৯ই নভেম্বর) সকালে উপজেলার ডিমলা সদর, পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, বালাপাড়া, নাউতারা, গয়াবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন ঘুরে আমন ধানের বাম্পার ফলন দেখা গেছে। সঠিক সময়ে চারা রোপণ সার প্রয়োগ বিষ ও বৃষ্টির পানি ও প্রয়োজনে শ্যালো মেশিন ব্যবহার করায় এবার উপজেলা জুড়ে আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা।

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সঠিক মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করে রোগ বালাই থেকে যেন আমন ধানকে মুক্ত করা যায় এ বিষয়ের ওপর বিভিন্ন জায়গায় উঠান বৈঠক ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সঠিক মাত্রায় সার ব্যবহার বিপিএইচ, মাজরা, বিএলবিসহ আমন ধানের অন্যান্য রোগ বালাই নির্মূলের জন্য আলোক ফাঁদসহ বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করায় গত বছরের চাইতে এবার আমন ধানের চাষাবাদে সফলতা পেয়েছেন কৃষক।

খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোট খাতা গ্রামের কৃষক শামীম আহমেদ জানান, তিনি ৫ বিঘা জমির উপর ২ বিঘায় স্বর্ণা-৫ ও বাকি ৩ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করেছেন। এতে সার বিষ ও লেবারসহ প্রতি বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার টাকা। কার্তিক মাসের ১৫ তারিখে হাইব্রিড ও অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বর্ণা-৫ ধান কাঁটা শুরু হবে বলে তিনি জানান।

অপর কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ও সঠিক সময়ে সার, বিষ প্রয়োগ করে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে তার। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি বিঘা জমি থেকে ৩২ থেকে ৩৩ মন ধান পাবো। এতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারব আশা করি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেকেন্দার আলী বলেন, এবছর উপজেলা পর্যায়ে ৩৬৯০ জন কৃষককে কৃষি প্রণোদনার আওতায় এনে প্রত্যেককে এক বিঘা জমিতে চাষাবাদের জন্য ৫ কেজি বীজ, ডিএপি এবং এমওপি সার বিতরণসহ উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণ ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত ১৫ হেক্টর মেট্রিকটন আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।