বিপুল ইসলাম আকাশ, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ

আসন্ন ২৮ নভেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনকে ঘিরে আচরণবিধি ভেঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। লঙ্ঘনের অনেক অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে না যথাযথ কোন ব্যবস্থা। এতে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন সরকার দলীয় নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। হয়রানির শিকার হচ্ছেন স্বতন্ত্ররা। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য অবশ্যই এসব অনিয়মের শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের নজনদারি বাড়ানোর দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের।
গত কয়েকদিনে উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তা-ঘাট, দোকান-পাট, হাট-বাজার ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীর ছবি সম্বলিত রঙ্গিন পোষ্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড ও প্যানা সাঁটানো আছে। সেগুলো এখনও অপসারণ করা হয়নি। যানবাহনের বহর নিয়ে চলছে প্রার্থীদের শো-ডাউন। যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলে দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন পথচারীসহ স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে নির্বাচনী প্রচারণায় মাইকিং দুপুর ২টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া থাকলেও সেটা মানা হচ্ছে না। এছাড়াও তাদের নির্বাচনী পথসভাগুলো বিশাল জনসভায় পরিণত হচ্ছে। সেই সাথে গাছে গাছে পেরেক ঢুকিয়ে পোস্টার ও ব্যানার প্রদর্শন করেছে। অসহায় বন্য ও গৃহপালিত জীব-পশুপাখি নির্বাচনী প্রতীক ও প্রচারের পণ্য বানিয়ে তাদের অধিকার হরণ করে অনেকে পরিবেশবিরোধী কাজও করছেন। সরকার দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি কোথাও কোথাও স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে তাদের সংখ্যা তুলনায় অনেক কম। দ্রুত বিধি মোতাবেক নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্যপদে প্রার্থী মো. মাহবুবার রহমান বলেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্র্থী সকাল সাড়ে দশটার দিকে মাইক বাজিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তা স্যারকে জানাতে অনেক বার তাকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু উনি আমার ফোন ধরনেনি।’
কঞ্চিবাড়ী ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মনোয়ার আলম সরকার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির লোকজন মিছিল-মিটিংসহ সব ধরণের আচরণবিধি ভঙ্গ করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা কেউ সরকারি দলের লোক আবার কেউ স্থানীয় সাংসদের লোক। এতে আমার লোকজন হতাশসহ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো নির্বাচনে প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সব প্রার্র্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। আগামী ২৮ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনে এর যথাযথ প্রয়োগ দেখতে চাই। এটা করা না গেলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। জনগণ নির্বাচনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে।’
আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে বিষয়টি স্বীকার করে সোনারায় ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী শ্রী রনজিৎ কুমার সরকার বলেন, ‘আর এ রকম হবে না। কিন্তু কি করবো দাদা কাউকে তো নিষেধ করতে পারি না। সে কারণেই অনেক মানুষ জড়ো হয় আমার মিটিংগুলোতে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সেকান্দার আলী বলেন, ‘নির্বাচনী প্রতীক ছবির দৈর্ঘ্য হবে ৩ মিটার এবং প্রস্থ্যও হবে ৩ মিটার। কালার করা যাবে না। এক কালার হতে হবে। আচারণ বিধি প্রতিপালনে প্রার্থীদের পত্র দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি কেউ না মানে তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, ৮৮৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতা করছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ৯৯, সংরক্ষিত নারী সদস্য ২১৮ ও সাধারণ সদস্যপদে ৫৫৯ জন। ১৩টি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্র আছে ১২৬টি। মোট ভোটার সংখ্য ৩ লাখ ১০ হাজার ৩০৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৮৪৩ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬০ জন।