মো. নাহিদুল ইসলাম ফাহিম, রাজবাড়ী :
রাজবাড়ীতে কৃষি বিপণন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পেয়াজ সংরক্ষণের ঘরের আবেদন জমা দিতে অনৈতিক লেনদেনের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে এ সংবাদটি প্রকাশিত হয়। তবে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করা কৃষকদের অধিকাংশরাই জানেন না তারা কেন দাড়িয়েছেন এই মানববন্ধনে। কেউ কেউ জানেন বানোয়াট তথ্য।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকালে রাজবাড়ী জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে ভুক্তভোগী সাধারণ কৃষকের ব্যানারে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষি বিপণন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাদের মোবাইল ফোনে কল করে তাদের জমির সংক্রান্ত কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া ও সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে কার্যালয়ে আসতে বলা হয়।
সাক্ষাতের জন্য কৃষকেরা কার্যালয়ে এলে সেখানে তাদেরকে জানানো হয়, তাদের আবেদন করা এই ঘরের প্রজেক্টে এক সাংবাদিক বাধার সৃষ্টি করছে। এই প্রজেক্টটি বাতিল হয়ে যেতে পারে। যাতে প্রজেক্টটি বাতিল না হয়ে যায় সেই দাবিতে একটি মানববন্ধন করা হবে। সেখানে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে আসা কালুখালী উপজেলার মাঝবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক রাশেদ খান বলেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণ করার জন্য ঘর নিজের টাকায় করতে গেলে প্রায় আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকার মতো খরচ হবে। এই কারণে ঘরের জন্য আবেদন করেছিলাম। গতকাল আমার কাছে অফিস থেকে ফোন করেছিল। আমার কাছে জমির ফটোকফি, জমির পর্চা ও আইডি কার্ড জমা দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার সকালে আসতে হবে। সেটা জমা দিতে অফিসে এসেছিলাম। এসে দেখি অফিসের সামনে অনেক মানুষ। মানববন্ধন হচ্ছে। আমাদের দাঁড়াতে বলা হলো। তবে কি কারণে মানববন্ধন হচ্ছে সেটা জানি না। সবাই দাড়িয়েছে তাই আমিও দাঁড়িয়ে ছিলাম। পরে ডিসি অফিসে নিয়ে এলো।
আরেক কৃষক আমীর হোসেন বলেন, ঘরের প্রজেক্ট নিয়ে একটা ঝামেলা হয়েছে। একারণে সবাইকে অফিসে আসতে হবে। দেখা করতে হবে। অফিস থেকে বলছে আপনারা আসেন দেখা করা লাগবে। সেজন্য আসছি। আমাদের দিয়ে সইটই করাইলো। এরপর দেখি অনেকে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছে। আমাকেও দাঁড়াতে বললো। সবাইকে দাঁড়াতে দেখে আমিও দাড়িঁয়েছি।
মানববন্ধনের মূল বিষয়টি জানার পর বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের অলঙ্কারপুর থেকে আসা কৃষক বলেন, আমরা এসেছি প্রজেক্টটা যাতে বন্ধ করে না দেওয়া হয় সেই দাবিতে। এখন কে টাকা নিছে কি নেয় নাই, সেটা আমরা জানি না। তবে যদি সেই অফিস সহায়ক সত্যিই টাকা নিয়ে থাকে এবং এ বিষয়ে যদি উপযুক্ত প্রমাণ থাকে, তবে তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।
প্রায় একই কথা বলেন অন্তত আটজন কৃষক। এদের অধিকাংশের বাড়ি রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলায়।
রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক খান মোহাম্মদ জহুরুল হক বলেন, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই মানববন্ধনের তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। কৃষি বিপণন অফিসের অনৈতিক লেনদেনের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে৷ এভাবে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা বা শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাবে না।
প্রসঙ্গত, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা কার্যালয়ের গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী রাজবাড়ী বালিয়াকান্দি উপজেলা ও কালুখালী উপজেলার শতাধিক কৃষক পেয়াজ সংরক্ষণের ঘরের জন্য আবেদন জমা দেন। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ আবেদন জমার সাথে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে অফিসে। সে টাকার দেওয়া হচ্ছে না কোনো রিসিট।
সত্যতা যাচাই করতে প্রায় দুই ঘণ্টা এই প্রতিবেদক কার্যালয় ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে। তাদের প্রত্যেকের কাছে ৩০০ টাকা দাবি করেন অফিস সহায়ক মো. এনামুল হক। সেখানে ঘটনাটি ভিডিও করার চেষ্টা করেন এই প্রতিবেদক।
ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক কৃষক তার আবেদনপত্রটি অফিস সহায়ক এনামুল হকের কাছে জমা দিয়েছেন। এনামুল হক আবেদন পত্রটি একটি রেজিস্ট্রি খাতায় তথ্য লিপিবদ্ধ করছেন। এসময় ওই কৃষক তার পরিধান করা পাঞ্জাবির পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে হাতের ভেতর রেখেছেন। খাতায় লিপিবদ্ধ করা শেষ হলে হাত পেতে ওই কৃষকের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন অফিস সহায়ক এনামুল হক। টাকা নেওয়ার একাধিক ভিডিও রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজবাড়ী কৃষি বিপণন কর্মকর্তা নাঈম আহম্মেদ জানিয়েছিলেন (বৃহস্পতিবার) , অফিসের লোকজন দিয়ে অনেকেই আবেদনপত্র লেখাচ্ছেন। এজন্য হয়তো তাদের দু’ একশো টাকা দিচ্ছে। তারপর বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যদি কেউ এই ধরণের কাজ করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।