রাজবাড়ী প্রতিনিধিঃ
রাজবাড়ীতে আমন উৎপাদন বেশি হলেও পোকার আক্রমণে লোকসান গুনতে হবে কৃষকের।তাদের দাবি এ বিষয়ে কোন সহায়তা করেনি কৃষি অফিস।  চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে আমন ধান। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এবছর জেলায় আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫১ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। জেলায় মোট ধান আবাদ করা হয়েছে ৫২ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে নয়শো হেক্টর জমি বেশি। গত বছর জেলায় আমন ধান আবাদ হয়েছিল ৫১ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। আবাদকৃত জমি হতে এবছর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার ৪৭৫ মেট্রিক টন। তবে ধানের উৎপাদন আশানরূপ হয়নি। মাজরা পোকা ও বাদামী গাছ ফড়িং এর আক্রামণের ফলে ধানে বের হয়েছে সাদা শীষ।এতে লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন ধান চাষীরা।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধানের আবাদ করা হয়েছে সদর উপজেলায় ১৪ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে। আর সবচেয়ে কম আবাদ করা হয়েছে গোয়ালন্দ উপজেলায় ২ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া পাংশা উপজেলায় ১৩ হাজার ৬২০ হেক্টর, কালুখালী উপজেলায় ৮ হাজার ৭৬৫ হেক্টর ও বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে।
সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাদামী গাছ ফড়িং ধান রোপনের পর থেকেই আক্রমণ শুরু করে । ধান গাছের রস চুষে খায়। যার কারণে ধান গাছ প্রথমে হলুদ হয় এবং পরে শুকিয়ে মারা যায়। আর মাজরা পোকা ধান গাছের কান্ড খেয়ে ফেলে । ধানের শীষ বের হওয়ার সময় এই পোকার আক্রমণ হলে ধান চিটা হয়ে যায়। অনেক সময় ধানের সাদা শীষ বের হয়।
রজবাড়ী সদর উপজেলা মিজানপুর, বরাট, দ্বাদশী ও রামকান্তপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ খেতে ধানের শীষ বের হয়েছে। অনেক জমির ধান পেকে গেছে। কিছু ‍ জমির ধান কেটে শুকানের জন্য জমিতেই ফেলে রাখা হয়েছ। কোন কোন খেতে কৃষক ধান কাটছে। কেউ আবার খেতের কাটা শুকনো ধান আটি বাঁধছে। অনেকেই ধানের বোঝা মাথায় করে বাড়িতে নিচ্ছে। জমিতে আধাপাঁকা ধান লক্ষীর গু (False smut) রোগে ব্যাপক আক্রান্ত হয়েছে। ধান ক্ষেতের মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে সোনালী ধান কালো দেখাচ্ছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা দাদশি ইউনিয়নের হোসনাবাদ মাঠের চাষি রমজান আলী বলেন, এবছর তিনি দুই পাখি জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। সবরকম সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধিতে ধানের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এছারা এবছর মাজরা পোকার আক্রমণ বেশি হওয়াতে অনেক ধান চিটা হয়ে গেছে। এতে ধানের উৎপাদন খরচ ওঠানো নিয়ে চিন্তায় আছেন তিনি।
একই ইউনিয়নের গ্রামের ধান চাষী আঃ রহিম বিশ্বাস বলেন, আমি এক একর জমিতে ধানের আবাদ করেছি। এই ধানই পরিবারের সাড়া বছরের খাবার হয়। এবছর ধানে তিনবার কীটনাশক ছিটিয়েছি। তার পরও ধান ভালো হয়নি। অনেক চিটা হয়েছে । এবার আর সারা বছর খেতে পাররো না।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলতি বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধানের আবাদ হয়েছে । এবছর আমরা ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছি। হাইব্রিড ধান বীজের প্রণোদনা দিয়েছি। আমন ধান চাষের সময়টাতে ধানের বাজার ভালো ছিলো। এছাড়া এবছর স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। উজানের পানি না আসায় অনেক নিচু জমিতে ধান আবাদ করা সম্ভব হয়েছে। তবে কোন কোন মাঠে মাজরা পোকা ও বাদামী গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণ হয়েছে। এতে কিছু ধানের  শীষ সাদা হয়েছে। তবে এর পরিমান ব্যাপক নয়। এটা বড় ধরণের কোন ক্ষতির পর্যায়ে যেতে পারেনি। দেখার সাথে সাথে  আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। তার পরও কোন কোন জমির ধান এই পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।