মোঃ ইসমাঈল হোসেন, বগুড়া সদর প্রতিনিধিঃ

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় প্রাইভেটকারের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগা নিয়ে কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় জোড়া খুন সংঘটিত হয় । নিহতদের পরিবারের দাবি স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমাদের ছেলে দুটিকে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন। এঘটনায় আরও একজন যুবক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

নিহত দুইজন হলেন- নিশিন্দারা চকর পাড়ার শরিফ(১৭)ঐএলাকার দুদুমিয়ার ছেলে ও রুমন(১৮)শফিকুল ইসলামের ছেলে । আহত যুবক হলেন হোসেন আকন্দ (১৯) একই এলাকার বাদল আকন্দের ছেলে। তারা গত সোমবার ঈদের রাতে চকরপাড়া এলাকায় হামলার শিকার হন।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে,স্থানীয়দের মাঝে থমথমে বিরাজ করছে। অধিকাংশরা মুখ খুলছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত সোমবার ঈদুল আজহার রাত ১১টা থেকে ১২টার দিকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,ঐ সময় বগুড়া শহরের গোয়ালগাড়ি এলাকায় একমুখী সড়কে কালো রঙের একটি প্রাইভেটকার যাচ্ছিল। এমন সময় উল্টো দিক থেকে দুটি মোটরসাইকেল দ্রুত গতিতে আসার সময় গাড়িটিতে ধাক্কা লাগার মতো অবস্থা হয়। পরে মোটরসাইকেল আরোহীরা ঘুরে গিয়ে হাকির মোড় এলাকায় যান। সেখানে গাড়িটিতে থাকা একজন মেয়ে ও ড্রাইভারের সাথে কয়েকজন যুবকের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে ওই যুবকরা চলে যান।

চকরপাড়ার বাসিন্দারা বলেন, রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার দিকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০জন লোক সশস্ত্র অবস্থায় আমাদের এলাকায় ঢুকে পড়েন এবং তারা শরিফ, রুমন ও হোসেনকে ধরে নিয়ে যান। এরপর ১টার দিকে গলির ভেতরে শরিফ ও রুমনের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। আর হোসেন দৌড় দিয়ে পালিয়ে আসে। হোসেনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর ঘটনাগুলো জানতে পারে ভুক্তভোগীর পরিবার।

হোসেন আকন্দ বলেন,ঈদের রাতে এলাকাতে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে শিক কাবাবের আয়োজন করেছিলাম।শিককাবাব খেয়ে আমি বাসায় চলে আসি। রাতে আবার আমাকে ফোন করে ডাক দেয় তখন রাস্তায় গেলে দেখি পাঁচ ছয়টি মোটরসাইকেলে কয়েকজন হট্টগোল করছিল।আমরা সেখানে গেলে আমাদের দিকে এলোপাতাড়ি গুলিছোরে।গুলি করার পরপরই আমি দৌড় দিই।কিন্তু কেন আমাদের ওপর হামলা তার কিছুই জানি না।
হোসেনের বাবা বাদল আকন্দ জানান, আমার ছেলের যদি কোন দোষ থাকে তাহলে তার অবশ্যই বিচার হবে।কিন্তু তাদের উপর হামলা করে দুটি ছেলেকে খুন করেছে আমার ছেলে আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে আমি এর সুস্ঠ বিচার চাই।

শরীফের মা হেনা বেগম বলেন,আমি শুনেছি একটি প্রাইভেট কারের সঙ্গে আমার ছেলের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লেগেছিল,হয়তো সেখানে আরও কিছু হয়েছে,আমি জানি না। কিন্তু রাতে কে যেন আমার ছেলেকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়।পরে রাতে আশপাশের বাড়ির লোকজন জানায় আমার ছেলের লাশ বাগানের পাশের গলিতে পড়ে আছে।

শরীফের বোন নীলা জানান,বাহিরে গুলাগুলি হচ্ছে কে বা কারা কাউকে মারছে,সবাই শুনছে। কিন্তু কেউ বাড়ী থেকে বের হচ্ছে না।
শরীফ ও রুমনকে যেখানে হত্যা করা হয় তার থেকে ২০ মিটার দূরে রুমনের নানা বাড়ি। এখানেই তিনি বসবাস করতেন। রুমনের নানা শরিফুল ইসলাম বলেন, ও ছোট বেলা থেকে আমার কাছেই মানুষ হয়েছে।আমার ডাক্তারি পেশা আছে। সেখানে রুমন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করে।গতকাল আমি রাত ১০টার দিকে ঘুমিয়ে পড়ি। তখনও সে বাইরে ছিল। ঈদের দিন অন্যদের মতো সেও ঘুরে বেড়াচ্ছিল বলে আমি তেমন কোনো চিন্তা করিনি।রাতে হঠাৎ কয়েকটি গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। এর কিছুক্ষণ পর একজন বাসার গেটে এসে আমাকে ডাক দেয়,আমি তখন খুলিনি। আরও পরে স্থানীয়দের ডাকে বের হলে তারা জানায় রুমনকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে রাতেই পুলিশ গিয়ে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে।এ সময় তাদের গায়ে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির খোসাও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে আমরা বিভিন্ন ধরনের কথা শুনছি। সবগুলো আমরা আমলে নিয়ে এগোচ্ছি। নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দাফন করবে পরিবার। তারপর আমাদের কাছে মামলার বিষয়ে আসতে চেয়েছে। তাদের স্টেটমেন্টের ওপর ভিত্তি করে আমরা অভিযোগ নেব। এ ঘটনায় ঐ এলাকার একজন আহত রয়েছে। এ ছাড়াও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং প্রকৃত ঘটনা কি তা বের করার জন্য আমাদের বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে ।গতকাল মঙ্গলবার বাদ মাগরীব জানাযা শেষে লাশ দুটির দাফন সম্পন্ন করা হয়।