এম এ রহমান খুলনা বিভাগীয় প্রধানঃ

যশোরে বার্ষিক পুলিশ সমাবেশ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্রধান অতিথি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বিপিএম বার পিপিএম বলেছেন, যশোর তথা দক্ষিণাঞ্চলের সন্ত্রাসমুক্ত ও জঙ্গিমুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়তে বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের পাশে ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার সবসময় জনগণের পাশে থেকে রাষ্ট্র ও সমাজের অবকাঠামো উন্নয়নে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে। আগামীতেও পুলিশ জনগণের পাশে থাকবে। এটি বাংলাদেশ পুলিশের অঙ্গীকার। আগামীর বলিষ্ঠ উন্নয়নের স্রোতে বাংলাদেশ পুলিশ ও জনগণ একসাথে কাঁধে কাধ মিলিয়ে কাজ করবে। এর প্রমাণ যশোরের এই অনুষ্ঠান। এখানে পুলিশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবীদ, সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশার মানুষের সমন্বয় হয়েছে।
যশোর পুলিশ লাইনে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে অপরাধ এবং অপরাধীর ধরণের পরিবর্তন হয়েছে। সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মানবপাচার, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। বাংলার মাটি থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের প্রত্যয় নিয়ে গঠিত পুলিশের বিশেষ ইউনিট এটিইউ, সিটিটিসিসহ অন্যান্য সকল ইউনিট সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের কার্যক্রম দেশ ও বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। ফলে, জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
প্রধান অতিথি আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন আরো বলেন, মাদক, দুর্নীতি, সাইবার ক্রাইম ও অন্যান্য সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই সার্ভিস ব্যবহার করে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষও সহজেই ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের জরুরি সেবা গ্রহণ করতে পারছে। এছাড়া নারী নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের দৃঢ় অবস্থান, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য পুলিশের সৃজনশীল উদ্যোগও ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারত্ব, দক্ষতা ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে আমাদের দেশের সম্মানকে উজ্জ্বল করেছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি পুনাক সভানেত্রী ড. তৈয়বা মুসাররাত জাহা চৌধুরী। এ সময় আরো বক্তব্য দেন-খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মঈনুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার।
এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন-পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পুলিশ সুপার রেশমা শারমীন, পুনাক যশোরের সভানেত্রী বিপ্লবী রানী, যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফিরোজ কবীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) জুয়েল ইমরান, সিনিয়র এএসপি (নাভারন সার্কেল) নিশাত আল নাহিয়ান,
এরআগে বিকাল ৩-০৫ মিনিটে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বার্ষিক পুলিশ সমাবেশের উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি নানা রঙের বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর তিনি পুলিশের কুচকাওয়াজ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠন উপভোগ করেন। পরে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
প্রধান অতিথিসহ পুলিশের ক্রীড়া শপথ পাঠ করেন-প্যারেড অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: বেলাল হোসাইন।
ইন্সপেক্টর হতে তদন্ত কর্মকর্তা ১০০ মিটার দৌঁড় প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন-অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: বেলাল হোসাইন। দ্বিতীয় হন এএসপি সাইফুল ইসলাম এবং তৃতীয় হয়েছেন আকিকুল ইসলাম।
মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান ৮০ দৌঁড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন, অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর, দ্বিতীয় হন ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, এছাড়া তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন বাঘারপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ভিক্টোরিয়া পারভীন সাথী।
অনূর্দ্ধ-১০ বছরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে সারমিন ইসলাম, দ্বিতীয় বিন মাহাথির ও তৃতীয় হয় সিয়াম।
বীর মু্িক্তযোদ্ধাদের ৫০ মিটার হাটা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী শহিদুল ইসলাম। এ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হন বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান, তৃতীয় হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী।
ইউপি চেয়ারম্যান ১০০ মিটার দৌঁড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন আতাউর রহমান মিন্টু, দ্বিতীয় হন ১৪ নং নরেন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ। এছাড়া তৃতীয় হন কবির উদ্দীন আহমেদ।
আমন্ত্রিত নারী কর্মকর্তা ৮০ মিটার দৌঁড় প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়।
উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা ও ভিআইপি বেলুন ফুটানো প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম। এ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আশিকুর রহমান। তৃতীয় হয়েছেন যশোর সরকারী এমএম কলেজের ফজলুর রহমান।
পুলিশ সদস্যদের বালিশ প্রতিযোগিতায় প্রথম হন কিবরিয়া। এছাড়া অনুপ দ্বিতীয় ও হানি তৃতীয় হন।
কলাগাছ আরোহন প্রতিযোগিতায় প্রথম হন কিররিয়া। দ্বিতীয় নায়েক অনুপ ও তৃতীয় হয়েছেন কনস্টেবল হাসিবুল।
বালিশ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন, ফাতিমা আক্তার ইভা। দ্বিতীয় হন সাথী ও তৃতীয় ফেরদৌসী।
এছাড়া যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতায় পুরস্কার অর্জন করে শিশু প্রতিযোগী সিয়াম বিন মনোয়ার।
এরআগে, দুপুরে বেলুন উড়িয়ে এই বার্ষিক পুলিশ সমাবেশ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন আইজিপি। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ২৭টি ইভেন্টের মধ্যে প্রথমদিন ১২টি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরন করেন আইজিপি এবং তার সহধর্মিণী।
পুলিশ সদস্যদের অংশগ্রহণে প্যারেড, মনোজ্ঞ ডিসপ্লে ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার পুলিশ সুপার ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, যশোরের রাজনৈতিক গণ।