মোঃ ফিরোজ আহমেদ, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:

প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে আত্মহত্যার প্রবণতা। কখনো সাংসারিক কোলাহল, কখনো ছেলে-মিয়ের সম্পর্ক বা সম্পর্কের বিয়ে মেনে না নেওয়ার প্রবণতা, কখনো শ্বশুর বাড়িতে খাপ খাওয়াতে না পারা। এসবের মূলে অল্প বয়স বা বাল্য বিয়েকে দায়ি করা হচ্ছে।

আর এ আত্মহত্যায় আমাদের কোনো করণীয় আছে বা আমরা তাতে দায় এড়াতে পারি কিনা এমন ধারণা থেকে আত্রাই থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারেকুর রহমান সরকার তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি আর্টিকেল লিখেছেন। লিখাটি হুবহু তুলেধরা হলো-
আমার নাবালিকা কন্যাকে ভাল ঘর বর এর লোভে তেমন কাউকে না জানিয়ে বিয়ে দিয়ে দিলাম। মেয়ের নতুন সংসার মেনে নিতে সমস্যা হচ্ছে। ভারি গলায় বললাম, “মানিয়ে নাও। সবারই সংসারে এমন হয়।”

গভীরে ঢুকলাম না, মেয়ের কথা বুঝার চেষ্টা করলাম না। শ্বশুর বাড়ীর প্রতিটি সদস্য অথবা সে বাড়ীর দু’ একজন বিষাক্ত মানুষের সাথে আপনার আদরের ছোট্ট মেয়েটি এডজাস্ট করতে পারছে না। তবুও আপনি বাবা, মা হিসেবে মেয়েকে না বুঝে বিষয়টি হালকা করে নিচ্ছেন, উল্টো মেয়েকেই দোষারোপ করছেন। এক সময় ছেলের পরিবারও বিষয়টি জেনে মেয়েটাকে আরো বেশি নির্যাতন করে। ফলাফল কাউকে আর মনের কথা বলতে না পেরে, কোথাও ঠাঁই না পেয়ে বেছে নেয় আত্নহত্যা। হয়তো তখন আপনার চেতনা ফিরে। কিন্তু তৎক্ষণে যা হারাবার তা শুধু একান্ত আপনিই হারিয়েছেন।

আবার নাবালক, নাবালিকাদের প্রেম, অবুঝ মনের ভালবাসা, অনেক সময় ১২ বছর বয়সের বাচ্চাদেরও দেখেছি আত্মহত্যা করতে। আমরা বাচ্চাদের তেমন খোঁজ নেই না, কাজে ব্যস্ত থাকি। ইমু, মেসেঞ্জার, ফেসবুক, টিভি সিরিয়ালে সময় দিতেই সময় শেষ হয়ে যায়। বাচ্চাদের সাথে বন্ধুর মত করে মেশার, তাদের কথা শুনার কিংবা বুঝার সময় পাইনা। বাচ্চারা ভুল করে বসে।

অনেক সময় শারিরীক সম্পর্কেও জড়ায়। আমরা যখন জানতে পারি তখন অনেক দুরে তার শেকড়। কিন্তু না বুঝে একটানে তুলে ফেলতে চাই। আবেগী বাচ্চারা নিজেদের ক্ষতি করে বসে। নিভে যায় প্রাণ প্রদীপ।

কখনো কখনো দাম্পত্য জীবনে এত বেশি প্রেম, প্রতারনা সহ্য করার ক্ষমতাও থাকে না। অন্যকে সাজা দেওয়ার জন্য নিজের জীবনাবসানের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে অনেকে। আত্নহত্যা প্রবনতা একটা মানসিক রোগ। যে একবার মুখে অথবা আচার আচারণে এমন প্রবনতা প্রকাশ করবে তখন মনে করতে হবে, সে মানসিক রোগে আক্রান্ত তার চিকিৎসার দরকার।

আর সবচেয়ে বেশি দরকার সময়। আপন মানুষদের সময়। আপনার আশে পাশে যারা আছে, আপনার পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী সবার প্রতি সতর্ক নজর রাখুন। কোন ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ দেখলে বুঝার চেষ্টা করুন। ঘটনার গভীরে যান, গুরুত্ব দিন। প্রয়োজনে চিকিৎসক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিন। কোন আত্মহত্যা কিংবা অস্বাভাবিক মৃত্যু আমাদের কাম্য নয়। সুস্থ ও সুন্দর একটা সমাজ হোক সবার একান্ত আপন।