রাজবাড়ী প্রতিনিধিঃ
রাজবাড়ীতে শ্বাশুড়িকে হত্যার দায়ে পুত্রবধু ও পুত্রবধুর প্রেমিককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোছাম্মৎ জাকিয়া পারভীন এই রায় দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁশুলি (পিপি) উজির আলী শেখ।
দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন স্বপ্না আক্তার (৩২) ও সোহেল মিয়া (৩৪)। স্বপ্নার স্বামী হাফিজুল ইসলাম শেখ আলীপুর ইউনিয়নের বারবাকপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মালয়েশিয়া প্রবাসী। সোহেল মিয়া একই ইউনিয়নের কোমরপাড়া গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে। নিহতের নাম হাজিরা বেগম (৫২)। তিনি একই গ্রামের তমিজ উদ্দিন শেখের স্ত্রী। নিহতের স্বামী তমিজ উদ্দিন শেখ বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ১৭ আগস্ট রাজবাড়ী সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
এজাহার ও আদালত সূত্রে জানা যায়, বাদীর তিন ছেলেমেয়ে। দুই জেলে প্রবাসী। মেয়ে ফরিদপুরের কানাইপুরে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করে। বাদীর স্ত্রী, বড় ছেলে হাফিজুলের স্ত্রী স্বপ্না আক্তার ও তার একমাত্র নাতি সানি (৯) একই বাড়িতে বসবাস করতেন। প্রতিদিনের মতো ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট দিবাগত রাতে রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েন। বাদী অন্য এক ঘরে আলাদা ঘুমাতেন। মাঝখানের ঘরে বাড়ির বিভিন্ন মালামাল রাখা হতো। অপর কক্ষে শ্বাশুড়ি ও ছেলেকে নিয়ে স্বপ্না ঘুমাতেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে চিৎকার শুনে হাজিরা বেগমের গলাকাটা লাশ ও স্বপ্নাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ওই দিন সন্ধ্যায় অজ্ঞাতদের আসামী করে নিহতের স্বামী রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, স্বপ্নার স্বামী ছিল মালয়েশিয়া প্রবাসী। স্বপ্নার সঙ্গে পাশের গ্রামের সোহেল মিয়ার পরকীয়া ছিল। ঘটনার রাতে স্বপ্নার সঙ্গে সোহেল মিয়াকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পায় শ্বাশুড়ি হাজিরা বেগম। এরপর তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরকীয়ার ঘটনাটি আড়াল করতে স্বপ্নার হাতেরও আঘাত করা হয়।
পিপি উজির আলী শেখ বলেন, পরকীয়ার জের ধরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটে। মামলার প্রধান আসামী সোহেল মিয়া ও তার সহযোগি স্বপ্না আক্তারকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়।