বিপুল ইসলাম সাগর ,সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মোহাঃ আবদুল আলীম মাহমুদ বিপিএম বলেন, ‘১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তিরাই ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বামনডাঙ্গায় চার পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। সেই অপশক্তি দেশটাকে পাকিস্তান বানাতে না পেরে বারবার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় দায়িত্ব পালনরত চার পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে।’

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সুন্দরগঞ্জ থানার বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আয়োজনে শহীদ চার পুলিশ সদস্যের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিআইজি মোহাঃ আবদুল আলীম মাহমুদ বিপিএম বলেন, ‘দেশের প্রচলিত আইনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে আদালত। যারা এই রায়কে কেন্দ্র করে চার বীর পুলিশকে হত্যা করেছে তারা নরপিশাচ। দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমেই এই নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশা করছি।’

সুরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতের রেফারেন্স ধরে ডিআইজি বলেন, যারা কোন কারণ ছাড়াই কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলো, তারা যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করে ফেলল। আর যারা কোন ব্যক্তিকে রক্ষা করল, তারা যেন সমস্ত মানুষকে রক্ষা করল। এই আয়াত অনুযায়ী বলা যায়, ২৮ ফেব্রুয়ারি যারা চার পুলিশকে হত্যা করেছে তারা যেন দেশের সবাইকে হত্যা করেছে।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিটা নাগরিকের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করতে বাংলাদেশ পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সকল অগনতান্ত্রিক অপশক্তিকে রুখে দিতে পুলিশেই যথেষ্ট। আমাদের জীবন দিয়ে হলেও অতন্দ্র প্রহরীর মতো রাষ্ট্রের সকল মানুষের নিরাপত্তা প্রদান করবো।

গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোঃ কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার মাহাতো, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিসেস আফরুজা বারী।

এসময় স্বাগত বক্তব্য দেন সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার ইফতেখারুল মোকাদ্দেম।

বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শফিকুজ্জামান সরকারের সঞ্চালনায় এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দা খুরশীদ জাহান স্মৃতি, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান হবি নিহত পুলিশ সদস্য হযরত আলীর স্ত্রী লায়লা বেগম প্রমূখ।

এর আগে, বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কোরআন খানি, নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে নিরবতা পালন করা হয়। এসময় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে উপহার সামগ্রী দেওয়া হয়। পরে নিহত চার পুলিশ সদস্যের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর পরই সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় শুরু হয় জামায়াত-শিবির ও সাঈদী অনুসারীদের নারকীয় তাণ্ডব। তারা উপরে ফেলে বামনডাঙ্গা রেল স্টেশনের রেল লাইন, অগ্নিসংযোগ করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় কার্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়। এরপর তারা বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে প্রবেশ করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে সেখানে থাকা চার পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই নারকীয় তান্ডবে চার পুলিশ হত্যার দশ বছর হলেও এমন লোমহর্ষক ঘটনার আজও শেষ হয়নি বিচার কাজ।