বিপুল ইসলাম আকাশ, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৩ ইউপিতে স্ব স্ব প্রার্থীর সমর্থকরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় রাত জেগে ভোট পাহারা দিচ্ছেন। উদ্দেশ্য ভোট কেনাবেচা ঠেকানো। রাত পোহালেই ভোট গ্রহণ শুরু। তাই প্রার্থীরা রাতেই এ কাজটা করতে পারেন- এমন আশঙ্কা থেকেই নিজ উদ্যোগে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন তারা।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) রাত থেকে প্রায় প্রতিটি গ্রামে চলছে এই পাহারা। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থী ও সমর্থকদের উৎকণ্ঠা ততটাই বাড়ছে। মাঠের ও ভোটের লড়াইয়ে কেউ কাউকে চুল পরিমাণ ছাড় দিচ্ছেন না। সন্ধ্যার পর থেকেই প্রতিটি ইউপির স্ব স্ব প্রার্থীর সমর্থকরা তাদের এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মধ্যরাত পর্যন্ত জোট বেঁধে পাহারা দিতে দেখা গেছে । সেইসঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়েও টহল দিতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। অপরিচিত কাউকে দেখলে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে সে কার সমর্থক।

এছাড়া নির্বাচনি এলাকাগুলোর দোকান-পাট, হাট-বাজার প্রভৃতি স্থানে একই আলোচনা- ইউপি নির্বাচনে কে হচ্ছেন কোন এলাকার আগামী দিনের অভিভাবক। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের আলোচনার সঙ্গে সমানতালে আলোচনায় রয়েছে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ও সাধারণ সদস্য পদ প্রার্থীরা।

রাত জেগে ভোট পাহারা দেয়া হচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রার্থীদের সমর্থকরা বলেন, ভোটের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। তাই শেষ মুহূর্তে কেউ যেন তাদের পক্ষের ভোটারদের টাকার লোভ বা ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বার্থ উদ্ধার করতে না পারে সে জন্যই এ পাহারা। কারণ আমরা চাই একজন ভালো মানুষ আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে আসুক। এবারের নির্বাচনে শেষ হাসি কে হাসে বা কার গলায় ওঠে বিজয়ের মালা সে অপেক্ষায় উপজেলার ১৩ টি ইউপির ভোটারবৃন্দ। আগামী ২৮ নভেম্বর (রবিবার) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের ১৩ জন চেয়ারম্যান, ৩৯ জন সংরক্ষিত সদস্য ও ১১৭ জন সাধারন সদস্য পদের বিপরীতে উপজেলা নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা করেছেন ৮৮৬ জনের। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১০৩ জন, সংরক্ষতি সদস্য পদে ২১৮ জন এবং সাধারন সদস্য পদে ৫৫৯ জন।এছাড়া ১৩টি ইউনিয়নের ১২৬টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। ১৩টি ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্য ৩ লাখ ১০ হাজার ৩০৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৪৩ জন এবং নারী ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬০ জন।

একাধিক চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোট কেনাবেচা ঠেকাতে বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডেই চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা পাহারা বসিয়েছেন। ভিন্ন ভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তারা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের একজন মেম্বার প্রার্থী বলেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভোট কেনার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় ওই প্রার্থীর লোকজন টাকা পয়সা ও খাদ্য সামগ্রী খোরমা, জিলাপি নিয়ে রাতের বেলায় ঘোরাঘুরি করছেন। আমার কর্মী সমর্থকেরাও ভোট বেচাকেনা ঠেকাতে গ্রামে গ্রামে পাহারা দিচ্ছেন।

রফিকুল ইসলাম বলেন নামে এক সমর্থক বলেন, ‘চোর-ডাকাত ঠেকাতে মানুষ রাতে পাহারা দেয়। আমরা চোর-ডাকাত নয়, ভোট বেচাকেনা ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় রাত জাগা কষ্টকর হলেও নির্বাচনের আগের রাত পর্যন্ত এ পাহারা চলবে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার কারণে প্রার্থীরা নানা ধরনের আশঙ্কা করবেন। এটাই স্বাভাবিক। তবে কারও বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের ব্যাপারে লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া নি।