রাজবাড়ী প্রতিনিধিঃ
রাজবাড়ীতে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা, ভাংচুর ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে রাজবাড়ী সাবেক দুই সংসদ সদস্য সহ রাজবাড়ী সদর থানায় দায়ের করা মামলায় ১১১জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ জনকে আসামী করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৯ নং আসামি রাজবাড়ী ১ আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম এবং ৩০ নং আসামি রাজবাড়ী ২ আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য নাসিরুল হক সাবুকে করা হয়েছে।
অপরদিকে রেলওয়ে থানায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও সাড়ে চারশ থেকে পাঁচশজনকে আসামী করা হয়েছে।
রাজবাড়ী থানায় মামলাটি দায়ের করেন উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা। অপরদিকে রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিধান চন্দ্র মল্লিক বাদী হয়ে রাতেই মামলাটি দায়ের করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের সজ্জনকান্দার বড়পুল এলাকার বাসভবন থেকে দুপুর ১২টার দিকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়কের পৌরসভা, কোর্ট চত্বর, পান্না চত্বর প্রদক্ষিণ করে। মিছিলের শেষের অংশ কোর্ট চত্বর প্রদক্ষিণ করার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে উদ্দেশ করে ইটপাটকেল ও গুলতিতে করে মার্বেল ছুড়ে মারতে থাকেন। তাঁরা সড়ক বিভাজকে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাদের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও তোরণ ছিঁড়ে ফেলেন। পুলিশও আদালতপাড়ার ভেতরে অবস্থান নিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় পিছু হটে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের বাসায় অবস্থায় নেন। পুলিশ ওই বাসা থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে বকুলতলায় অবস্থান নেয়। সেখানে থেকে সংঘর্ষ হয়। বিএনপির কর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পুলিশও বাসার দিকে এগিয়ে গিয়ে ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে, কাদানে গ্যাস ছোড়ে। এতে বিএনপির অন্তত ২০জন নেতাকর্মী আহত হয়। পরে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করবে না, এমন শর্তে নেতা-কর্মীরা বাড়ি চলে যান।
অপরদিকে দুপুর সোয়া ১টার দিকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের একটি অংশ রাজবাড়ী রেলস্টেশনে উপস্থিত হয়। রেলওয়ে প্লাটফর্ম সংলগ্ন রাজবাড়ী রেলওয়ে থানা। হুট করে অনেক মানুষের উপস্থিতি দেখে রেলওয়ে পুলিশ তাদের শান্তশ্লিষ্ট ভাবে স্টেশনে অবস্থান করার কথা বলেন। এক পর্যায়ে তাঁরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। স্লোগান দিতে থাকে। ইটপাটখেল নিক্ষেপ করে। এতে রেলওয়ে থানার ওসিসহ কয়েকজন আহত হয়। পরে রেলওয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাদের ধাওয়া দেয়। আহত পুলিশ সদস্যরা রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন।
রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার ওসি সোমনাথ বসু বলেন, শনিবার দিবাগত রাতে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০জনকে। তবে মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
রাজবাড়ী সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান বলেন, মামলায় ২৮জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অন্য আসামী পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার আসামীদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নাশকতা, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা, ভাংচুর ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মিছিল থেকে অতর্কিত ভাবে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়েছে। পুলিশ জানমাল রক্ষা ও জনদুর্ভোগ এড়াতে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।