রাজবাড়ী প্রতিনিধিঃ
বিভিন্ন অনিয়মের কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-২ আসনের (পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী) ঘোষিত ফলাফল বাতিলপূর্বক পুন.নির্বাচনের দাবি করেছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হক। এবিষয়ে সোমবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে।
রাজবাড়ী-২ আসনে মো. জিল্লুল হাকিম (নৌকা) দুইলাখ ৩১ হাজার ৮৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী নুরে আলম সিদ্দিকী হক (ঈগল) পেয়েছেন ৪৬ হাজার ৪৬৬ ভোট। এছাড়া এস এম ফজলুল হক (সোনালী আঁশ) ৭৬৫ ভোট, আবদুল মতিন মিয়া (মশাল) দুই হাজার ৬০২ ভোট, আবদুল মালেক মন্ডল (ছড়ি) ৮৪৭ ভোট ও শফিউল আজম খান (লাঙ্গল) দুই হাজার ৫৩৪।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তিন দিন আগে থেকেই নৌকা সমর্থক ও বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গভীর রাতে আমার নির্বাচনী এলাকার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে আমার ঈগল প্রতিকের সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য আমার ভোটারদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। পুরো নির্বাচনী এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও বোমা ফাটিয়ে আতংকের সৃষ্টি করে। যার ফলে নির্বাচনের দিন আমার কর্মী সমর্থকরা ভীত সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েন। ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন রাজবাড়ী-২ নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মো. জিল্লুল হাকিমের নৌকার সমর্থকরা পেশীশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রীতিমত সমগ্র নির্বাচনী এলাকায় রীতিমত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতিকের পক্ষে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করা হয়। কিন্তু নৌকা প্রতিকের কর্মী-সমর্থকরা বল প্রয়োগ করে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসারদের সহায়তায় প্রায় সবকেন্দ্র থেকে আমার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। এমনকি ভোট গণনার সময়ও ভোট কেন্দ্রে আমার কোন পোলিং এজেন্টকে বুথে থাকতে দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে জানা যায় নিজেদের মনোনীত ব্যক্তিকে ঈগল প্রতিকের এজেন্ট হিসেবে দেখিয়ে নির্বাচনী ফলাফল সিটে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়েছে। পাংশা উপজেলার মৌরাট ইউনিয়নের বাগদুলী উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা প্রকাশ্যে জাল ভোট দেয়। সেখানে উপস্থিত হয়ে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাগণের কাছে প্রতিকার চাইলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। এখানে প্রবাসী ভোটার হামিদুর রহমানের (ভোটার ক্রমিক নং-২৩৩) ভোট দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম বাদশার ছেলে আশিক। জাল ভোট দেয়ার সময় সাংবাদিকদের সামনে হাতেনাতে ধরলেও প্রিজাইডিং অফিসার রহস্যজনক কারণে তাকে ছেড়ে দেয়। পাংশা উপজেলার পুঁইজোর সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে নৌকার কর্মী রানা বিশ্বাস জাল ভোট দিতে এসে ধরা পরলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে নৌকার কর্মীরা অব্যাহতভাবে জাল ভোট প্রদান করতে থাকে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার রামদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিজে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ফেলতে থাকে। কালুখালী উপজেলার মাঝবাড়ী ইউনিয়নের হাড়িভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন প্রকাশ্যে নৌকা প্রতিকের পক্ষে সিল মারতে সহায়তা করায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু তদস্থলে একই অভিযোগে অভিযুক্ত উক্ত কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইংডিং কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার দেকে রহস্যজনক কারণে ভারপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনার নিজ এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ পাংশা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী হাবাসপুর কে রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মাত্র একজন কনস্টেবলকে দায়িত্বরত দেখা যায়। কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের গোপালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নাছিমা খাতুন প্রতিটি ব্যালটে নিজের অগ্রিম স্বাক্ষর ও পিছনে নির্বাচন কমিশনের গোল সিল মেরে ব্যালট বাক্সের মধ্যে ঢোকাতে থাকেন। পার্শবর্তী গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার সমরেশ কুমার দে নৌকা প্রতিকে প্রকাশ্যে সিল মেরে বাক্সে ঢোকাতে থাকে। পরবর্তীতে তিনি নৌকা প্রতিকের আর কোন সিল মারবেন না বলে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকারোক্তি দেন।
পাংশা উপজেলার মৈশালা দারুল উলুম মোহাম্মদিয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে স্থানীয় যুবলীগ নেতা মারুফের নেতৃত্বে কিছু উচ্ছৃঙ্খল সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে নৌকা প্রতিকে সিল মারে। একই কেন্দ্রে অন্য বুথে নৌকা প্রতীকের তিনজন করে পোলিং এজেন্ট দেখা যায়। এবিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের সাথে কথা বলতে গেলে সেখানে নির্বাচনী কাজে দায়িত্ব পালনরত তিনজন সাংবাদিকের উপর চড়াও হয় এবং সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সাবেক ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সিনিয়র এ্যাড. ফরহাদ আহমেদ নিজে ভোট দিতে গিয়ে দেখেন তার ভোটও অন্য কেউ প্রদান করেছে। বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের নবাবপুর ইউনিয়নের বড় হিজলী দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে প্রিজাইডিং অফিসার ও স্থানীয় চেয়ারম্যান বাদশা আলমগীরের নেতৃত্বে আমার পোলিং এজেন্টকে বের করে দেয়। এছাড়া কুরশী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও কুরশী উচ্চ বিদ্যালয়ে সাধন হাকিমের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারতে বাধ্য করে।