মো. নাহিদুল ইসলাম ফাহিম, রাজবাড়ী :

রাজবাড়ীতে গত কয়েকদিনে কমেছে বড় মাছের দাম। তবে স্থিতিশীল রয়েছে ছোট মাছ, সবজি, মুরগী ও ডিমের দাম। সরবরাহ বাড়ায় শহরের বাজারগুলোতে গত আট-নয় দিনের ব্যবধানে বড় মাছের দাম প্রতি কেজিতে কমেছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। ইলিশের দাম কমেছে প্রতি কেজিতে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা।

প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার রাজবাড়ী জেলা শহরের বাজারগুলোর সাপ্তাহিক হাটের দিন। এই রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) জেলা শহরের বিভিন্ন বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বড় ইলিশ (সোয়া কেজির বেশি ওজনের) বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ থেকে ১৭০০ টাকায়, যা গত ১ সপ্তাহ আগেও ছিল ২০০০ থেকে ২২০০ টাকায়। অর্থাৎ মাত্র সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে প্রতি কেজিতে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। গত কয়েকদিনের তুলনায় দাম কিছুটা কম থাকায় মাছের দোকানগুলোতে প্রচুর সংখ্যক ক্রেতাদের ভীর দেখা গেছে।

বড় মাছের মধ্যে রুই মাছের দাম কমেছে। তবে কিছুটা বেড়েছে পদ্মার পাঙ্গাস ও কাতল মাছের দাম। অন্যান্য মাছের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে  ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। অন্যদিকে দাম কিছুটা বেড়ে বাজারে কাতল বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা এবং পদ্মার বড় পাঙ্গাসের দাম রাখা হচ্ছে সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ১৩০০ টাকা।

১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়। এছাড়াও চাষের পাঙাস ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়, বাগদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৭২০ টাকায়, কাতল ৩৫০ থেকে ৪৮০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কই মাছ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়, টেংরা মাছ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়, বাইম মাছ ১ হাজার ৫০ টাকায়, সিলভার কার্প ১৭০ টাকায়। বড় তেলাপিয়া ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তবে কাচকি মাছসহ নদীর বা খালের বিভিন্ন পাঁচমিশালী মাছ আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে।

বাজারের খুচরা ইলিশ বিক্রেতা বিধান হালদার বলেন, স্বাভাবিকের চেয়ে বাজারে মাছের আমদানী তুলনামূলক বেশি। মাছের সরবরাহ বেশি থাকায় গত নয়-দশ দিনের তুলনায় বড় মাছগুলোর দাম কমেছে। নদীতে পানি কমতে শুরু করায়, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সমুদ্র ও নদীতে মাছ ধরতে পারছেন। তবে কমছে না চাষের মাছের দাম। এবছর খাল ও পুকুরে পানি একেবারেই কম হওয়ায় বাজারে চাষের মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। যা আসছে তার উৎপাদন খরচও বেশি।  যার ফলে বাজারে চাষের মাছের দাম বেশ কিছুদিন যাবত বেড়ে স্থিতিশীল অবস্থায় আছে।

গত ২ সপ্তাহ যাবত স্থিতিশীল রয়েছে সবজির বাজার দর। আগের দামেই পাওয়া যাচ্ছে প্রায় সব ধরনের সবজিই।
তবে কিছুটা কমেছে কাচা মরিচের দাম। কয়েকদিনের ব্যবধানে ৮০ টাকা কমে কাচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়।  সবজি বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা দরে। শুকনা মরিচ ৫০০ টাকা, আদা ২০০ টাকা এবং রসুন ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা সবজি বিক্রেতারা বলেন, বেশ কিছুদিন যাবত সবজির বাজার স্থিতিশীল রয়েছে, শুধু কাচা মরিচের দাম কিছুটা কমেছে। আর কোনো সবজির দামে কোনো তারতম্য নেই।

বাজারে সবজির মধ্যে প্রতি কেজি আলুর দাম রাখা হচ্ছে ৫৫ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৫৫ টাকা, কচুরমুখী ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, পটল ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৩০ টাকা, কচুর লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঝিঙে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ো ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, চলকুমড়ো প্রতি পিস ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, কাচা কলা ও লেবু প্রতি হালি (আকারভেদে) ১৮ থেকে ২২ টাকা।

এছাড়াও ফুলকপি ১০০ টাকা, বাধাকপি ৫০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, টমেটো ১৮০ থেকে ২১০ টাকা, লাফা বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও মুলা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডিমের দাম বাড়লেও রাজবাড়ীতে এখনো বাড়েনি ডিমের দাম। গত অর্ধমাসের বেশি সময় ধরে স্থিতিশীল রয়েছে ডিমের বাজার। বাজারে বড় সাইজের লাল ডিম বিক্রি করা হচ্ছে প্রতি হালি ৪৮ টাকায় এবং ছোট লাল ডিম ৪০ টাকায়।  এছাড়াও বাজারে প্রতি হালি সাদা বড় ডিম ৪৮ টাকায়, হাসের ডিম ৭৫ টাকায়, দেশি মুরগির ডিম ৮০ টাকায়। সোনালী মুরগির ডিম ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, কোয়েলের ডিম ১২ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

রাজবাড়ীর বিসমিল্লাহ ডিম আড়তের মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, রাজবাড়ীতে বেশ কিছুদিন যাবত ডিমের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা হওয়ায় সেই অঞ্চলের ডিম উৎপাদন বন্ধ এবং ডিমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় খুব তাড়াতাড়িই ডিমের দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।