মোঃ ইসমাঈল হোসেন, বগুড়া প্রতিনিধিঃ

বগুড়ায় সবজি নিয়ে বিপাকে পরেছে কৃষক। বাজারে সবজির স্তূপ।ক্রেতা নেই। সার, বীজ, কীটনাশকের খরচ বেড়েছে অনেক। লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকাই উঠছে না কৃষকের। ফলে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা।

বর্তমানে বগুড়ার হাটে-বাজারে ২ থেকে ৫ টাকা কেজিতে মূলা ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে। দাগওয়ালা মূলা-ফুলকপির দাম আরও কমে দেড় থেকে ২ টাকা কেজি। কমেছে বাঁধাকপির দাম, প্রতি পিস ৬ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা।

তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার মৌসুমের শুরুতে শীতকালীন সবজির ফলন ও দাম দুটিই ভালো পেয়েছেন কৃষকরা। এখন কিছুটা কমলেও পরে উৎপাদন খরচ উঠে যাবে। একটি ফুলকপির উৎপাদন খরচ ৫ টাকার বেশি, কিন্তু কৃষককে বেচতে হচ্ছে দুই টাকায়।

উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় মোকাম বগুড়ার মহাস্থানে একেকটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে মাত্র দুই টাকারও কম দামে। পাইকারিতে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা মণ দরেও ক্রেতা পাচ্ছেন না সবজি চাষিরা।

কৃষকের দাবি, শীতকে মোকাবিলা করে ফলানো এ সবজির দাম পাচ্ছেন না মোটেও। উল্টো মাত্র ২ টাকায় প্রত্যেকটি ফুলকপি বিক্রি করে গুনছেন লোকসান।

সরজমিনে দেখা গেছে, শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুমে মহাস্থান হাটে সবধরনের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। তবে দাম কম পেয়ে চাষিদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। ৭ দিন আগেও ফুলকপি ২০ থেকে ৩০ টাকা, মূলা ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি ও বাঁধাকপি ২০ থেকে ৩০ টাকা পিস বিক্রি হলেও এখন এসব সবজির দাম নেমে এসেছে প্রতি কেজি ৫ টাকার নিচে।

বুধবার(১লা জানুয়ারি-২৫) প্রতি কেজি ফুলকপি ২ থেকে ৪ টাকা, মূলা ২ থেকে ৫ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৬ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে মহাস্থান হাটে। শুধু মূলা-ফুলকপি নয়, কমেছে অন্যান্য সবজির দামও।

কৃষকরা জানান, ২১ মণ ফুলকপি দুই হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তার মধ্যে ১ হাজার টাকা চলে গেছে ভ্যান ভাড়া দিতেই।

মহাস্থান হাটের পাইকাররা বলছেন,বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর সব সবজির সরবরাহ বেড়েছে। তাই অনেক কিছু বিক্রি হচ্ছে পানির দামে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বেড়েছে উৎপাদন। কিন্তু কৃষকরা ক্ষতি কীভাবে পোষাবেন তার সমাধান দিতে পারেনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। জেলায় এই মৌসুমে সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৬ হাজার টনেরও বেশি সবজি চাষ হয়েছে।

চাষিরা জানান, তারা মৌসুমের শুরুতে মূলা ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও গেল ৭ দিন ধরে দাম কমে এসেছে। সর্বশেষ ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও ৭ দিনের ব্যবধানে তা ২ থেকে ৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

৭ দিন আগে ১৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে ফুলকপি বিক্রি করেছেন, এখন তা ২ থেকে ৮ টাকা সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করছেন। এতে করে চাষিরা উৎপাদন খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায়।

এদিকে ফুলকপি-মূলার পাশাপাশি বাঁধাকপির দামও বেশ কমেছে। প্রতি পিস ৬ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুন ২০ থেকে ২৫ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, সিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মতলুবর রহমান জানান, বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার ফলন ভালো হয়েছে। যার কারণে আমরা দেখতে পাচ্ছি সরবরাহ এবং চাহিদা এই দুটোর সম্পর্কের কারণে বর্তমানে বাজার মূল্য কিছুটা কম। তবে গেল কয়েক বছর ধরেই বগুড়ার চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন, বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার ফলনও ভালো হয়েছে। জেলায় এই মৌসুমে সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৬ হাজার টনেরও বেশি সবজি উৎপাদন হবে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে যাচ্ছে বগুড়ার সবজি।