রাজবাড়ী প্রতিনিধিঃ
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির জামালপুর ইউনিয়নের মাশালিয়ায় জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত শান্তি ও সম্প্রতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে যে সমস্যাটা তৈরি করতে চায়। যারা জামায়াত শিবির করে তারাই শুধু না। এক ধরণের মানুষই আছে খারাপ। এরা শান্তি চায়না। এই ধরনের মানুষের উসকানিতে কেন আমরা কেন নাচবো। আমরা কেন মানুষের গায়ে আঘাত দেব। এখানে মানুষ চেষ্টা করছে। পুলিশ চেষ্টা করছে। দলীয় নেতাকর্মীরা চেষ্টা করছে। তারপরও কিন্তু এঘটনা ঘটেছে। যারা উসকানি দিয়েছে তারা যে শুধু জামায়াত করে, বিএনপি করে তাই না। আমাদের দলের লোকও আছে।আমরা প্রত্যেককে চিনি। আমরা প্রত্যেকের নাম জানি। এই উসকানি দেওয়াটা সহ্য করা হবে না।
জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের আয়োজনে ১ লা জুন শনিবার বিকেলে মাশালিয়া বাজারে শান্তি ও সম্প্রতি সমাবেশে জিল্লুল হাকিম বলেন, আমরা কার মাথায় বারি দেব। আমরা মুসলমান-হিন্দু সবাই ভাই ভাই। আমার বাড়ির চারপাশের লোক হিন্দু। আমার সাথে যারা থাকে তারাও অনেকে হিন্দু। আমাদের এলাকার মানুষ শান্তিতে আছে। আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী উন্নয়নের ছোয়া পৌঁছে দিয়েছে। আজ প্রত্যেকটা বাড়িতে আলো জলে। প্রতিটি মানুষ পাকা রাস্তা দিয়ে হাটে। আমারা চেষ্টা করছি আরও ভালো করার। আপনারা স্টপেজ চেয়েছেন আমি রেলমন্ত্রী হওয়ার সাথেসাথে জামালপুর রেলস্টেশনের গাড়ি থামানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। আপনারা শান্তিতে থাকবেন। ধরেন আজ যদি কোন মুসলমান লোকের জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। তার জন্য যদি কোন মুসলমান মানুষের রক্ত না পাওয়া যায় । কোন হিন্দুলোক যদি তাকে রক্ত দেয় তাহলে কি সেই রক্ত নেবেন না। নেবেন। তাহলে কেন ভেদাবেদ। সবার উপরে মানুষ সত্য। মানুষ সত্যের অন্তরায় কোনকিছু নেই।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ আছে। ১২ জুন থেকে আবার চালু হবে। বিভিন্ন নিউজে যেটা এসেছে বাস মালিকদের সুবিধা দিতে ট্রেন বন্ধ করা হয়েছে এটা সঠিক না। এটা কোনভাবেই হতে পারে না। রেলের কেউ বসে নেই। যদি কেউ এধরনের কাজ করার কথা ভাবে তাহলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানপুর রেলস্টেশনে ট্রেন থামানো বিষয়ে কোন পরিকল্পনা নেই। রাজবাড়ী-ঢাকা রুটে যে কমিউটার ট্রেন দেওয়া হয়েছে। এটা অতিরিক্ত। এটা ফরিদপুর স্টেশনে থামানোর কথা ছিল না । এখন সেখানে থামানো হবে। আপাতত আর কোথাও থামানোর অবস্থা নেই।
শান্তি ও সম্প্রতি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ, বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইফতেখারুল আলম প্রধান, বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন, সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ওয়াহিদুজ্জামান। এসময় সহকারি পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল ) সুমন কুমার সাহা, বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এহছানুল হাকিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২ মে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে জামালপুর ইউনিয়নের মাশালিয়া গ্রামে সংখ্যালঘু পরিবারের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করার ঘটনা ঘটে । জামালপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোকন বিশ্বাসের ছেলে দিপু বিশ্বাস গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে চাকুরি করেন। তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ কয়েকটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। বিষয়টি জানার পর তিনি আইডিতে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যার্থ হন। এরপর বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে জানান। পরে শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) ও লিখিত অভিযোগ দেন। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া কেন্দ্র করে দিপুর গ্রামের বাড়ি মাশালিয়া বাজারে সন্ধ্যার পর স্থানীয় লোকজন জড়ো হন। তারা মিছিল বের করে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত সোয়া ৯টার দিকে খোকন বিশ্বাস ও তাঁর আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে হামলা চালানো হয়।