মোহাম্মদ আলী বিশেষ প্রতিনিধি:

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে গতকাল বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বগুড়া গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বাজারের হাফ কিলোমিটার পূর্ব পাশে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঢাকঢোল সানাই বাজিয়ে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ ও সন্নাসী মেলা।মেলাকে কেন্দ্র করে প্রসাশনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মেলা কমিটির সুন্দর আয়োজনে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উৎসব মূখর পরিবেশে মেলার সকল কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরগরম হয়ে উঠেছে মেলার আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে আত্নীয় স্বজনের। উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের অর্ন্তগত গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্ন প্রায় দুইশত বছর পূর্বে থেকে স্থানীয় সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে গাড়ীদহ নদী ঘেঁষে সম্পূর্ন ব্যক্তি মালিকানা জমিতে একদিনের জন্য মেলাটি বসে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ মেলায় এসে ক্রয়-বিক্রয় করে। মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে আত্নীয় স্বজন এসে ভিড় জমিয়েছে। ঈদ বা কোন উৎসবে জামাই-মেয়েসহ অন্যান্য আত্নীয় স্বজনদের দাওয়াত না দিলেও তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে মেলা উপলক্ষে দাওয়াত দিতেই হবে, যা রেওয়াজে পরিনীত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, মেলা উপলক্ষে গত কয়েক দিন আগে থেকেই ওই এলাকার প্রতিটি বাড়ীতে আত্নীয় স্বজন আসতে শুরু করেছে। যা মেলার কয়েক দিন পর্যন্ত আত্নীয় স্বজনের ধুমধাম চলবে বলেও জানান তারা।মেলাটি একদিনের জন্য হলেও ওই এলাকায় মেলার আমেজ থাকে সপ্তাহ ব্যাপী। মেলা উপলক্ষে খরচার জন্য নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার বছরের শুরু থেকে মাটির ব্যাংক অথবা অন্য কোথাও রেখে সুযোগ মতে অল্প অল্প করে টাকা-পয়সা জমা রেখে মেলার সময় বের করে।এই মেলাকে ঘিরে উপজেলার দুর্গাহাটা,বাইগুনি, সুবোধ বাজার এবং দাড়াইল বাজার সহ বগুড়া জেলার কয়েকটিস্থানে অবৈধভাবে মেলা বসানো হয়।ওই স্থানে অবৈধভাবে মেলা বসানোর কারনে চরম হুমকির মূখে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্ন্যাসী ও জামাই মেলাটি। পোড়াদহ মেলায় প্রসিদ্ধ হলো বড় বড় হরেক রকমের মাছ, হরেক রকম মিষ্টি,কাঠ ফার্নিচার স্টিলের আলমারি বড়ই (কুল), কৃষি সামগ্রীসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও খাদ্য দ্রব্য হাট-বাজারের ন্যায় কেনা-বেচা করা হয়ে থাকে এই মেলায়।এ ছাড়া বিনোদনমূলক সার্কাস, মোটর সাইকেল-কার, নৌকা খেলা ও নাগোরদোলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলাটি জন্মের পর থেকে মহিষাবান গ্রামের মন্ডল পরিবার পরিচালনা করে আসছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেলার লাইসেন্স দেয়া হয়। বাংলার প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি হয়ে থাকে। এ ধারাবাহিকতায় এবার ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি হয়।মেলাটি গত বুধবার হলেও কয়েক দিন আগে থেকে দোকান ঘর স্থাপন করা হয়েছে। তৈরী করা হয়েছে হাজার হাজার মণ মিষ্টি। যা কয়েক দিন আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা মিষ্টি বিক্রয় করেছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে মন্ডল পরিবারের সদস্য ও মেলার পরিচালক এবং স্থানীয় মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মন্ডলের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্ন্যাসী ও জামাই মেলার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে এবং এ বছর মেলায় অন্যান্য বছরের তুলনায় মাছ ও মিষ্টি সামগ্রী বেশি বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যাপারে গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আফতাবুজ্জামান-আল-ইমরান জানান, ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হয়। যাতে করে মেলায় কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সনাতন চন্দ্র সরকার জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পোড়াদহ মেলায় আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। তবে মেলায় অবৈধ কোন কিছু করতে দেয়া হবে না। অপর দিকে বুধবার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা শেষ হলে আগামী কাল বৃহস্পতিবার আলাদা স্থানে ২টি বউ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলাকে ঘিরে সর্বত্র চলছে উৎসবের আমেজ।