মোঃ ফিরোজ আহমেদ, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ

নওগাঁর আত্রাইয়ে কামররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন৷

আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার শিল্পীরা, টুংটাং শব্দই বলেদিতেছে ঈদ দোয়ারের সামনে কড়া নাড়ছে। দিন রাত চলছে ছুরি, চাপাতি,বটি, দা, তৈরি ও শানের কাজ,খাওয়া দাওয়া ভুলে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের৷ বছরে তো এই সময় টা ব্যস্ত থাকার কুরবানি ঈদের পর তো আর তেমন কোন কাজর চাপ থাকে না।

তাইতো এই সময়টাকে বেশ উপভোগ করে তারা, তবে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে সয়ংক্রিয়ভাবেই চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি হওয়ায় আগামীতে এই পেশা টিকবে কিনা এ নিয়ে শংকিত রয়েছে কামার শিল্পীরা।

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন বাজার বা কামার-পাড়া ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যন্ত জনপদের কামাররা এখন মহাব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।লাল আগুনের লোহায় কামারদের পিটাপিটিতে মুখর হয়ে উঠেছে কামার দোকানগুলো,টুংটাং শব্দটি তাদের জন্য এক প্রকার ছন্দে পরিনতি।
এ ছন্দের তালে চলছে স্বহস্তের জাদুময়ী হাতুড় আর ছেনীর কলা কৌশল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন কামারের দোকানে গ্রাহকের আনাগোনা এখন বেড়েই চলেছে।
কামাররাও দা, বটি, ছুরি,শান দিতে ব্যস্ত, দোকানের সামনে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রেখেছেন নতুন নতুন দা, ছুরি, বটি।

তৈরিকৃত প্রতিটি নতুন দা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, ছুরি ১০০ থেকে ২৫০ টাকা, বটি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, জবাই ছুরি ৩৫০ থেকে ১০০০ টাকায়।

কামার শিল্পী নাসের আলী ও সন্জয় কামার বলেন, এই কাজের উপর তাদের পরিবারের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া জামা-কাপড় সহ বছরের খোরাকী নির্ভর করে, যদিও কামার শিল্পের আনুসাঙ্গিক কয়লা ও লোহার দাম লাগামহীন ভাবে উঠানামা করতে থাকে। তাই কামাররা বাপ-দাদার এ পেশাকে ধরে রাখতে কয়লা ও লোহার দাম নিয়ন্ত্রন ও সহজ শর্তে ঋনের দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে। বিশেষ করে কোরবানির ঈদ আসলেই আমাদের ব্যবসা চাঙা হয়। গ্রাহকের অর্ডার সামাল দিতে ইতিমধ্যে আমরা দোকানে বাড়তি কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে থাকি। শাণ দেওয়ার যন্ত্রে ব্যবহারের জন্য আনা হয়েছে বাড়তি কয়লা ও হাতল, তবে আমাদের ব্যবসা আর আগের মত ভালো নেই। বিদেশী চাইনিজ প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে আমাদের তৈরীকৃত ছুরি, বটি, দা প্রভৃতির চাহিদা কমে যাচ্ছে।

এদিকে কামার ব্যবসায়ীর সাথে একমত প্রকাশ করে এক ক্রেতা বলেন, আমরা এখন আর একান্তই প্রয়োজন ছাড়া কামারদের দিয়ে কোন কিছু তৈরী করি না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, খুব সল্প মুল্যেই এখন টেকসই চাইনিজ বিভিন্ন চাপাতি, চাকু রেডিমেট কিনতে পাওয়া যায়। এসব পন্যে মরিচা ধরার সম্ভাবনা থাকে না। তাই ছুরি, চাপাতি, দা প্রভৃতি এখন আমরা বাজার থেকে কিনে নেই।

কামার শিল্পী মোঃ তফেজ উদ্দী,মোঃ সাইদুল ইসলাম, আব্দুল হামিদ আরও বলেন, সারা বছর এই কোরবানির ঈদের (ঈদুল আযাহা) জন্য অপেক্ষায় থাকি আমরা। এ সময়টিতে যারা কোরবানির পশু জবাই করেন তারা প্রত্যেকে চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি করেন। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময়টিতে কাজ বেশি হওয়ার কারনে লাভও বেশি হয়।
ইতিমধ্যে আমাদের পরিচিত কিছু গ্রাহক দা, বটি, ছুরি বানানোর অর্ডার দিয়ে গেছে এবং শাণ দিতে অর্ডার পেয়েছি। পাশাপাশি নতুন বটি, ছুরি তৈরি করছি। বিশেষ করে কোরবানির ১ থেকে ২ দিন আগেই গ্রাহকের আনাগোনা আরও বেড়ে যায় বলেও জানান তিনি।