রাজবাড়ী প্রতিনিধিঃ
বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ ও আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার করে গত বছরের জুন মাসে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য মালয়েশিয়া যায় রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের মাহেন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল মাজেদ খাঁন (২৯)। তিনি একই গ্রামের মোয়াজ্জেম খাঁনের ছেলে। গত ১০ মার্চ মালয়েশিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন মাজেদ।
আব্দুল মাজেদ খান তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। পারিবারিক ভাবে সে বিবাহিত। তার সাত বছর বয়সী একটি কণ্যা সন্তান রয়েছে।
পরিবারের সাথে কথা বলেন জানা যায়, নিহত আব্দুল মাজেদের পিতা চায়ের দোকান করে সংসার পরিচালনা করেন। আব্দুল মাজেদ দেশে থাকায় অবস্থায় শ্রমিকের কাজ করতো। সে সময় তারা অনেকটাক ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে। বাড়ির পাশে একটি ভিটে বিক্রি করেও সম্পূর্ণ দেনা পরিশোধ করতে পারে না। তারপর দেনা পরিশোধ করার জন্য বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ও আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে স্থানীয় মালয়েশিয়া প্রবাসী রোকনের সাথে যোগাযোগ করে মালয়েশিয়া পাঠায় মাজেদ কে। মালয়েশিয়া পৌঁছানো পর তিন মাস কোন কাজ পায়না। তারপর সে একটি কোম্পানিতে কাজ শুরু করে। একমাস কাজ করার পর আবার এক মাস বসে থাকে। তারপর নতুন একটি কোম্পানিতে নির্মাণের কাজ শুরু করে মাজেদ। এর মধ্যে সে বাড়িতে ৪০ হাজার টাকা পাঠায়। তিন মাস পর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। নতুন ভিসা করার জন্য মেডিকেল করতে যাচ্ছিল সে। গত সোমবার মেডিকেল করতে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সে মারা যায়।
মাজেদের মা মাজেদা বেগম বলেন, ‘রবিবার সকাল ১১টার দিকে মাজেদের সাথে আমার শেষ কথা হয়। ফোনে কথা বলার সময় আমাকে বলেছির আগামিকাল (সোমবার) মেডিকেল করাতে যাবো। আমার জন্য দোয়া কইরো। সোমবার দুপুর দুইটার দিকে ফোন আসে মাজেদ এক্সিডেন্ট করেছে। সে আর নাই।’
মাজেদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে মালয়েশিয়া পাঠাতে সাড়ে ছয় লাখ টাকা দিতে হয়েছিল। এই সব টাকায় ঋণ করে আনা। কয়েকটি সমিতি ও আত্মীয়দের কাছ থেকে এসব টাকা জোগাড় করেছিলাম। ছেলে যাওয়ার পর থেকে তেমন টাকা পাঠাতে পারেনি। মাত্র একবার টাকা পাঠিয়েছিল। ব্র্যাক থেকেই আমি আড়াই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। এছাড়া বুরো বাংলাদেশ, গ্রামীণ ব্যাংক, মাইক্রোফাইন্যান্স প্রোগ্রাম (এমএফসি), ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার (ভার্ক), টিএমএস, ভিপিকে ফাউন্ডেশনসহ কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি। সপ্তাহে প্রতিদিনই আমার কিস্তি দিতে হয়। এক সমিতি থেকে ঋণ এনে আরেক সমিতির কিস্তি দেই। ছেলেটা টাকা পাঠানো শুরু করেছিল। ছেলের লাশ আনার টাকাটাও আমাদের কাছে নেই এখন। কিভাবে আনবো। কারকাছে বলবো। কে আমার ছেলের লাশ এনে দেবে। সরকারের কাছে আমি সহযোগিতা চাই।
প্রতিবেশি বৃষ্টি খাতুন বলেন, মাজেদের পরিবারটি অনেক ঋণগ্রস্ত। মালয়েশিয়ায় তার দেবর আবদুল মমিনের কাছেই সে থাকতো। সেই তাদের কাছে মৃত্যুর সংবাদটি জানিয়েছে। লাশ আনতে সরকারিভাবে যদি সহযোগিতা করা হয় তাহলে হয়তো তারা সন্তানের মুখটা একবার দেখতে পেত।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, কালুখালী রতনদিয়া ইউনিয়নের মাহেন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ি পার হলেই নদী রক্ষা বাধের পাড় ঘেষে দুই বাড়ি পরেই মাজেদের বাড়ি। বাড়িতে একটি আধাপাকা টিনের ঘর। ঘরের সামনেই একটি খাল। ঘরের সামনে বারান্দায় মাজেদের মা ও আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিরা মলিন মুখে বসে আছে। কান্না করতে করতে মাজেদের মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তিনি আর কথা বলতে পারছেন না। প্রতিবেশি ও আত্মীয়রা তাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। মাজেদের বাবা ইউনিয়ন অফিসে ছেলের কাগজপত্র ঠিক করতে গেছেন।
কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহুয়া আফরোজ বলেন, ‘মরদেহ দেশে আনার বিষয়টি প্রবাসী মন্ত্রনালয় দেখে। আমরা আমাদের মত সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।’