আহসান হাবীব নাহিদ,গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি :

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এটিএম রাশেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ২০২১ সালে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা তদন্ত করে কয়েক পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে অধিদপ্তরে। এরপর এ বছরের ২২ মার্চ ২০২৩ বেসরকারি কলেজ শাখা-৩ এর সহকারী পরিচালক তপন কুমার দাস কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুর রহমান এর বরাবর এক পৃষ্ঠার চিঠি পাঠিয়ে পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে মতামত চান।

সুনির্দিষ্ট অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে অধ্যক্ষের নিয়োগ বাণিজ্য, জাল সনদে শিক্ষক এমপিওভক্তি করন ও সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয় । কলেজের ছাত্র-ছাত্রী,অভিভাবক ও এলাকাবাসী এবং কঞ্চিপাড়া সার্বিক উন্নয়ন কমিটির পক্ষে হাবিবুর ইসলাম তাজু, মেহেদী হাসান বাবু, শরিফুল ইসলাম, রায়হান আকন্দ রাজু এ অভিযোগপত্র পাঠান।

শিক্ষাগত যোগ্যতা বিহীন বিধি সম্মত ভাবে নিয়োগ না হওয়া এবং অনলাইনে ভুয়া সনদসহ মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে এমপিও ভুক্ত হওয়ায়।কানিজ আফসানা জামান ইনডেক্স নং ঘ ৫৬৭৯৮০৩২কে জরুরী ভিত্তিতে বাতিল করা হোক। এবং মে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বেতন ভাতা বাবদ মোট উত্তোলিত টাকা সরকারি কোষাগারে জমাদানের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হোক।

জাল তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে অবৈধভাবে এমপিও করিয়ে দিয়ে সরকারি অর্থ অপচয় সহযোগিতা করার জন্য
টি.এম. রাশেদুজ্জামান (ইনডেক্স নং জ ৪৩৭১৫৩) অধ্যক্ষ, কাঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজ, ফুলছড়ি গাইবান্ধা এর এমপিও সাময়িকভাবে স্থগিতসহ তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া দিয়েছে মাউশি। এবং প্যাটার্ন বহির্ভূত নিয়োগ নিয়ে ২০০৪ খ্রি. এমপিও ভুক্ত হওয়ার প্রভাষক অর্থনীতি সুনীল কুমার বর্মণ (ইনডেক্স নং ৩০১০৬৬০) ও নিয়োগদানকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পাড়ে বলে যানান।

এমতাবস্থায় বর্ণিত বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার মাতামতের আলোকে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর অনুচ্ছেদ ১৮.১ (গ) ও (ঙ) অনুযায়ী কেন অধ্যক্ষ জনাব এ.টি.এম রাশেদুজ্জামান, জনাব কানিজ আফসানা জামান এবং জনাব সুনীল কুমান বর্মণ এর এমপিও কেন বাতিল করা হবে না মর্মে তাদের এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছ মাওশি
প্রত্যেককে ৫ (পাঁচ) কর্ম দিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছে মাওশি।

তদন্ত প্রতিবেদনে আর বলা হয় মুশাররত সুলতানা প্রভাষক অর্থনীতি এর বিষয়ে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০০৭ সালের ৭ জুন অনিস্পন্ন লীভ টু আবেদন নং ৫৯৩ ডভ ২০০৬ নিষ্পত্তি না হওয়া কলেজের অধ্যক্ষ এ টি এম রাশেদুজ্জামানের ইনডেক্স নং (জ ৪৩৭১৫৩) এর এমপিও স্থগিত করা হউক মর্মে নির্দেশনা প্রদান করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি-উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুর রহমান বলেন ৫ কার্যদিবসের মধ্যে অত্র প্রতিবেদনের আলোকে অধ্যক্ষ সহ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে (মাউশি) বরাবরে
প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিবো।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ এটিএম রাশেদুজ্জামান রোকন বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়েছে। এই অভিযোগ গুলো মিথ্যা আমাকে হেয় করার জন্য এসব করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) অনিয়ম-দুর্নীতির। অধ্যক্ষ সুব্রত নন্দী ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ফওজিয়া ভানুর সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে। কমিটি গত বছর ১২ অক্টোবর তদন্তকাজ সম্পন্ন করেন।

অভিযোগপত্র ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধ্যক্ষ এটিএম রাশেদুজ্জামান রোকন কঞ্চিপাড়া ডিগ্রী মহাবিদ্যালয় এর

অধ্যক্ষ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নিয়োগ বাণিজ্য, কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করে টাকার বিনিময়ে চাকরিসহ বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

শিক্ষক পরিষদ কর্তৃক গঠিত ক্রয় ও অর্থ কমিটি থাকলেও অধ্যক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী নিজেই ক্রয় করেন এবং ইচ্ছেমতো বিল ভাউচারসমূহ পাশ করান।
এবিষয়ে এলাকা স্থানীয়রা বলেন অধ্যক্ষ অনেক দিন ধরে এগুলো অপরাধ করে আসছেন। অধ্যক্ষ ফুলছড়ি উপজেলার আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকায় এলাকাবাসী তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে তাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে থাকেন। অনেকে জোরালো দাবি করে বলেন
অধ্যক্ষ তার কলেজে দলীয় পদের ক্ষমতায় এ সব অপকর্ম করতে সাহস পান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন এই অধ্যক্ষ একজন দুষ্ট প্রকৃতির, দিনদিন তার অপরাধের মাত্রা বেড়েয় চলেছে, তার বিভিন্ন অপরাধের কারনে কলেজ সহ শিক্ষা ব্যবস্থার বদনাম হচ্ছে। তাই অতি দ্রূত সময়ে অধ্যক্ষ সহ কলেজে সকল অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ যানান।